জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রো, প্রাইভেটকার, সিএনজিসহ নানা মাধ্যমে পাটুরিয়া ও আরিচাঘাট হয়ে মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরছেন। এ সুযোগে চড়া ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
অবৈধভাবে দূরপাল্লার রুটে যাত্রী বহনকারী এসব পরিবহন আটকে ট্রাফিক পুলিশকে মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায় করতেও দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) গাবতলীতে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে শহরে থাকা মানুষেরা গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করছেন। নানাভাবে চেষ্টা করেও দূরপাল্লার বাস না পেয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি, পিকআপ ও ট্রাক ভর্তি করে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট হয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ছোট শিশু ও পরিবারসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
দেখা গেছে, গাবতলী থেকে ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে সেখান থেকে লোকাল বাসে তারা বাড়ি যাচ্ছেন। উপচেপড়া মানুষের ভিড় থাকায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকার থামলেই যাত্রীরা যাবেন নাকি, যাবেন নাকি বলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়ার লোভে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গাড়ি ভর্তি করে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে এই পরিবহনগুলো।
মিরপুরে মাটিকাটা এলাকায় নাতির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। সকাল থেকে গাবতলীতে বসে আছেন খুলনায় গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন বলে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় নানাভাবে চেষ্টা করেও যেতে না পেরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে করছিলেন তিনি।
এই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, তিন মাস আগে নাতির বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে বাড়ি যেতে চাচ্ছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভাড়া বেশি হওয়ায় তার পক্ষে বাড়ি যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ব্যাগভর্তি কাপড় নিয়ে বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। চলমান লকডাউনের মধ্যে এর আগেও দুদিন এখানে এসে ব্যর্থ হয়ে আবার নাতির বাড়িতে ফিরে গেছেন তিনি।
ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন শাহনাজ বেগম। মেয়ে অসুস্থ হওয়ায় ঢাকায় এসেছিলেন তাকে দেখতে। বর্তমানে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় জরুরিভাবে যশোরে গ্রামের বাড়ি যেতে চাচ্ছেন। ভোর থেকে গাবতলীতে এসে অপেক্ষা করলেও বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। আল্লাহর ওপর ভরসা করে জীবন বাজি রেখে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান বলে জানান।
ছয় মাসের দুধের শিশু, স্ত্রীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাবতলী এসেছেন ঢাকায় থাকা এক পরিবার। এই পরিবারের কর্তা ইউসুফের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, লকডাউনে এক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোতে পারবো না, এ কারণে পরিবারসহ বাড়ি যাচ্ছি। বাড়িতে মা ও আত্মীয়-স্বজন আছে, বন্ধের দিনগুলো সবার সঙ্গে কাটাতে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান তিনি।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় আরিচা ঘাট পর্যন্ত যেতে একটি প্রাইভেট কার ২ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান ইউসুফ।
লকডাউনের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গাবতলী থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন উবারে প্রাইভেটকারচালক মিজান মিয়া। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মাথাপিছু ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় যাত্রী নিয়ে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দালালদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে যাত্রী তোলা হয় বলে জানান তিনি।
উবার-পাঠাও বন্ধ থাকায় হাইওয়ে রোডে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিচ্ছেন শামসুল আলম। তিনি জানান, ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় যাত্রী নিয়ে ঘাটে পৌঁছে দিচ্ছেন।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসানাত বলেন, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে অবৈধভাবে যেসব মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে যাত্রী নেয়া হচ্ছে, তাদের আটক করে যাত্রী নামিয়ে ৩ হাজার টাকা জরিমানা স্বরূপ মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে তিনি একা ডিউটি করায় সবাইকে আটক করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে কেউ কেউ যাত্রী নিয়ে চলে যেতে পারছেন। তবে সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ জনকে আটক করে মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান তিনি।