• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মশা মারার হাঁস গায়েব, এবার এলো ব্যাঙ

প্রকাশ:  ২২ মার্চ ২০২১, ১২:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মশার লার্ভা নিধনে এক বছর আগে ঝিল, লেক ও পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার হাঁস এবং তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এখন ৯০ ভাগ হাঁস গায়েব হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত বছরের তুলনায় এবার নগরে মশা বেড়েছে চার গুণ। দিশেহারা হয়ে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, মশার লার্ভা নিধনে তাদের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। এখন তারা ডিএসসিসির আওতাধীন ঝিল, লেক, পুকুর এবং জলাশয়ে কয়েক হাজার ব্যাঙ ছেড়েছে। এসব ব্যাঙ মশার লার্ভা নিধনে সক্ষম হবে বলে দাবি ডিএসসিসির।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন কীটতত্ত্ববিদ এবং পরিবেশবিদরা। তারা জানান, এই ধরনের কার্যক্রম হাস্যকর। বিশ্বের কোনো দেশে ব্যাঙ দিয়ে মশা নিধনের নজির নেই। ঢাকার লেক, জলাশয় ও পুকুরের পানি অনেক দূষিত। কোনো প্রজাতির ব্যাঙ এই পানিতে বাঁচতে পারবে না। তাই এই উদ্যোগ ভালো ফল দিতে পারবে না। এমন উদ্যোগ নেয়ার আগে কীটতত্ত্ববিদের পরামর্শ নেয়ার দরকার ছিল।

এর আগে ২০১৮ সালে এডিস এবং কিউলেক্স মশা নিধনে নগরের বিভিন্ন ড্রেনে গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করেছিল ডিএসসিসি। কিন্তু ড্রেনের দূষিত পানিতে কয়েক দিনের মধ্যেই সব মাছ মারা যায়। এ নিয়ে তখন আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ ৯৩৩ জন। আর মারা গিয়েছিলেন ১৪৮ জন, যা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙে। আক্রান্ত এবং মৃতদের অধিকাংশই ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মশা নিধনের প্রতিশ্রুতি দেন শেখ ফজলে নূর তাপস। সেই নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী। পরে গত বছরের ১৪ জুন মশার লার্ভা ধ্বংসে রমনা পার্ক লেকে হাঁস, আর খিলগাঁও বটতলা ঝিলে হাঁস এবং তেলাপিয়া মাছ অবমুক্ত করেন তিনি। কিন্তু তদারকির অভাবে কয়েক মাসের মাথায় বেশিরভাগ হাঁস চুরি হয়ে যায়। কিছু হাঁস বিভিন্ন রোগে মারা যায়। এখন কয়টা বেঁচে আছে, সেই হিসেব সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। ফলে যে উদ্দেশ্যে হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছিল তার সুফল মিলেনি।

নাগরিকদের অভিযোগ, মশা নিধনের নামে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে ডিএসসিসি। অথচ মশা নিধনে তাদের সঠিক কর্ম পরিকল্পনা নেই। অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তারা।

সম্প্রতি ঢাকার মশার গুরুত্ব নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্য বলছে, গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় মশার ঘনত্ব চার গুণ বেড়েছে। এখন যে মশা দেখা যাচ্ছে তার ৯০ শতাংশই কিউলেক্স মশা। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার প্রকোপ বাড়ে।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মাসখানেক আগে মশা নিধনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছিলেন ডিএসএসসি মেয়র শেখ তাপস। ওই বৈঠকেই ব্যাঙ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ডিএসসিসি নিজেও অবগত নয়।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আমরা এই ব্যাঙগুলো ছেড়েছি। ব্যাঙগুলো বড় হলে মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। এতে নগরে মশার উপদ্রব কমবে। তবে আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করব এই ব্যাঙগুলো বাঁচে কিনা। যদি সফল হই, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে কবে, কোন লেকে, কতো সংখ্যক ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে লেকে বা পুকুরে ব্যাঙ ছাড়া যেতে পারে। তবে ঢাকার পুকুরের পানি যে পরিমাণে নোংরা, সেখানে ব্যাঙ বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি কিছু ব্যাঙ বেঁচেও যায়, তাহলে খুব বেশি লার্ভা খেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারবে বলে মনে হয় না।

সর্বাধিক পঠিত