• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

পরিবেশবান্ধব এলইডির আলোয় আলোকিত সড়ক

প্রকাশ:  ০৭ মার্চ ২০২১, ১৭:০৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নিয়ন আলোর মতোই চাঁদের আলো যেখানে ফিকে হয়েছে, সেখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে অত্যাধুনিক এলইডি লাইট। এমন লাইটে দিনের আলোর মতো ঝকঝক করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন সড়ক। গভীর রাতেও আলোর মিছিলে যোগ দিতে ছুটে আসছেন অনেকেই।

সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা জানিয়েছেন, এখন শহরের মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে আলোয় মোড়ানো এই সড়কগুলো। এলইডি সংযোজন হওয়ায় চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করছেন পথচারীরা। এভাবে পুরো ঢাকা এলইডির আলোয় আলোকিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এসব লাইট চোখের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এই লাইটগুলো পরিবেশবান্ধবও

গত ১ জানুয়ারি আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্পের’ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ডিএনসিসি এলাকায় ৩৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৪৬ হাজার ৪১০টি এলইডি লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই এ লাইট স্থাপনের কাজ শেষ হবে। প্রতিটি লাইটের আয়ুকাল ২২ বছর। এসব লাইট চোখের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এই লাইটগুলো পরিবেশবান্ধবও।

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, এলইডি লাইটগুলো ফিলিপাইন, পোল্যান্ডের তৈরি। প্রতিটি বাতিতে পাঁচ হাজার ৭০০ কেলভিন আলো রয়েছে, যা দিনের মতো স্বচ্ছ আলো দেয়। ওয়ারেন্টি ১০ বছরের। আয়ুকাল এক লাখ ঘণ্টা। সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাতিগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে অন-অফ, আলো কমানো (ডিমিং) যাবে। এছাড়া কোথাও কোনো বাতি বন্ধ থাকলে কেন্দ্র থেকে তার অবস্থান জানা যাবে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আগামী পাঁচ বছর তারাই বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

ইতোমধ্যে আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, গুলশান, বনানীসহ বেশকিছু এলাকায় এলইডি সড়কবাতি নেভানোর কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে সরেজমিনে দেখা যায়, আগারগাঁওয়ে প্রতিটি সড়কে এলইডি বাতি জ্বলছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাত ১১টার পরও ফুটপাত দিয়ে নাগরিকরা স্বচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করছে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফাঁকা সড়কে বেড়াতে বের হয়েছেন। শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, গুলশান, মহাখালী, বিজয় সরণি, বনানী এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে।

রাত সাড়ে ১০টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে হেঁটে শ্যামলীর দিকে যাচ্ছিলেন রায়হান কবীর। তিনি বলেন, রাতের সড়ক এবং ফুটপাত ফাঁকা থাকে। এর মধ্যে এলইডি বাতির আলোয় পুরো এলাকা ঝকঝক করছে। হাঁটতে ভালোই লাগছে। অথচ আগে সন্ধ্যার পর এসব এলাকার রাস্তাঘাট ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রায়ই ঘটত ছিনতাইয়ের ঘটনা।

রায়হান তন্ময়, রকিব হাসান, সোহেল রহমান ও নাদিয়া নামে চার বন্ধু আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সামনের সড়কে ফুটপাতে বসে গল্প করছিলেন।আলাপকালে তারা জানান, আগারগাঁওয়ের সড়কে এলইডি বাতি স্থাপনের পর পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে গেছে। এখন সপ্তাহে অন্তত একবার এই সড়কে বেড়াতে আসেন তারা। এভাবে ঢাকার প্রতিটি সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন করলে মানুষ রাতে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন।

শেরেবাংলা নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাকসুদ হোসেন। তিনি বলেন, শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও একটি পরিকল্পিত এলাকা। সড়ক এবং ফুটপাত অনেক চওড়া। রাতে যখন সবগুলো সড়কে বাতিগুলো জ্বলে পুরো এলাকা আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। আশপাশের অনেকেই রাতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হন।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডিএনসিসিকে স্মার্ট সিটি করার জন্য এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। এলইডি লাইট ডিএনসিসি থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সনাতন পদ্ধতিতে সুইচ থেকে এটা চালু বা বন্ধ করতে হবে না। চলতি বছরের মধ্যেই ডিএনসিসির প্রতিটি অলিগলি আলোকিত হবে।