• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের শিকার ফাহিম সালেহ

হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটনে মরিয়া নিউইয়র্ক পুলিশ

প্রকাশ:  ১৮ জুলাই ২০২০, ০৯:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে নিরাপদ ও বিত্তশালীদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ম্যানহাটানের লোয়ার ইস্ট সাইডের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তরুণ-উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ্র (৩৩) খন্ডিত লাশ উদ্ধারের ৩৫ ঘণ্টা পরও পুলিশ হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এমনকি ওই বহুতল ভবনের সিসিটিভিতে ধারণকৃত মাথায় টুপি, হাতে গ্লাভস এবং মুখোশ পরিহিত ব্যক্তির পরিচয়ও উদ্ধার করা যায়নি ১৫ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফাহিমকে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। প্রতিহিংসাপরায়ণতার চরম প্রকাশ ঘটেছে এ হত্যাকান্ডে- এমন অভিমত পুলিশের। হত্যার মোটিভ হিসেবে অনেকেই ‘ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব’ মনে করছেন এবং পেশাদার খুনি ভাড়া করে মোটরসাইকেল শেয়ার রাইডিং বাংলাদেশ ও নেপালে ‘পাঠাও’, পরে নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় ‘গোকাডা’র জনক ফাহিমকে খুন করা হয়েছে।

ট্যাক্সি ব্যবসায়ী চক্র এমন নৃশংসতার মাধ্যমে ফাহিমের মোটরসাইকেল রাইডিং শেয়ার মার্কেটকে নির্মূলের প্রয়াস চালাতে পারে বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। বিশ্বে সবচেয়ে চৌকস পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে তল্লাশি, সম্ভাব্য আলামত সংগ্রহের পর আশপাশের রাস্তা ও ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছেন বলে বুধবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ফাহিমের পরিবার অবিলম্বে ঘাতককে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আবেদন জানিয়েছে। গত সোমবার বিকালে ১০ তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সপ্তম তলায় নিজ অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন ফাহিম।

জন জে হাইস্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০৩ সালে শিশু-কিশোরদের জন্য ওয়েবসাইটে ভিডিও গেম (উইজ টিন) বানিয়ে বিপুল অর্থ আয়ে সক্ষম হন ফাহিম। ফাহিমের মা-বাবা ৩০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানেই জন্ম ফাহিমের। যুক্তরাষ্ট্রে এসে লেখাপড়া করেছেন নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৮০ মাইল দূর পকিস্পি সিটিতে। করোনার প্রকোপ শুরু হলে মধ্যমার্চ থেকে দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্ত নিজেদের পুরনো বাড়িতেই ছিলেন ফাহিম। লকডাউন শিথিল হওয়ায় নিজের কেনা ম্যানহাটানের এই লাক্সারি অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছিলেন। সব সময় উদ্ভাবনী চিন্তায় নিবিষ্ট থাকায় বিয়ের কথা ভাবতে পারেননি ফাহিম। ৩৩ বছর বয়সেই নিজের উদ্ভাবিত মডেলের প্রচলন ঘটিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের মালিক হয়েছিলেন ফাহিম। ‘সম্ভবত এটাই কাল হয়েছিল উদীয়মান এ টেকনোলজি জায়েন্টের। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ ফাহিমের এই এগিয়ে চলা সহ্য করতে পারছিলেন না’- এমন মন্তব্য করেছেন কয়েকজন প্রবাসী। তারা মনে করছেন, সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ফাহিম কখনোই কারও সঙ্গে রেগে কথা বলেননি। নিজের মধ্যে নিবিষ্ট থাকতেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের নেশায়।

 

ফাহিমের পেশাদার ঘাতক সোমবার বিকালে ইলেভেটর দিয়ে ফাহিমের সঙ্গেই সপ্তম তলায় ওঠে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লোকটি কালো পোশাক পরিহিত ছিল। মাথায় টুপি, মাস্ক সবকিছু ছিল কালো। হাতে ছিল বড় একটি স্যুটকেস। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ফাহিমকে হয়তো মাথায় আঘাত করে দুর্বল করা হতে পারে। এর পরই বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গলা কাটা হয়। দুই হাত ও দুই পা কাটা হয়। বুকের মাঝখানেও করাত চালিয়ে দুই ভাগ করা হয়। এরপর খন্ড খন্ড অংশ আলাদা পলিথিন ব্যাগে ভরা হয়। ফ্লোরের রক্ত মুছে ফেলা হয় কৌশলে। করাতেও ছিল না রক্তের দাগ। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, ফাহিমকে হত্যার পর টুকরো টুকরো লাশ ওই স্যুটকেসে ভরে কোথাও নেওয়া হতো, যাতে ফাহিম নিখোঁজ রহস্য উদ্ঘাটনেও অনেক সময় পেরিয়ে যায়। তারা মনে করছেন, খন্ডয খন্ড লাশ স্যুটকেসে ভরার আগেই হয়তো ওই অ্যাপার্টমেন্টে আসতে আগ্রহী কেউ নিচে থেকে কলিং বেল টিপেছিলেন। সে শব্দেই ঘাতক সবকিছু ফেলে পালিয়েছে। ফাহিমের অভিভাবকরা বলেছেন, ঘাতক কীভাবে ভবন থেকে পালাল তাও জানতে হবে। কারণ, যে পথে ঢুকেছিল সে পথেও বেরিয়ে গেছে- সে দৃশ্য ফুটেজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্ন ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের।

সর্বাধিক পঠিত