• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কেন, কীভাবে গ্রেপ্তার হলেন ডা. সাবরিনা

প্রকাশ:  ১৪ জুলাই ২০২০, ১০:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফোন করলে বাসায় গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হতো। বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া হতো। তাদের দিতে হতো ১০০ ডলার বা ৮ হাজার ৬০০ টাকা। তবে সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়া একদিন পরেই পরীক্ষার ফল দেয়া হতো। জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় গেল জুন মাসে।

একজন ভুক্তভোগী তেজগাঁও থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তার বাসায় গিয়ে করোনা টেস্টের নমুনা নিয়ে আসা হয়েছে। পরদিনই ফলাফল জানিয়ে বলা হয়, তার করোনা শনাক্ত হয়নি। ওই ভুক্তভোগী পরে অন্য জায়গায় পরীক্ষা করিয়ে করোনা পজিটিভ ফলাফল পান।

এমন অভিযোগের তদন্ত করতে নেমে পুলিশ প্রথমে জেকেজির সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী জেকেজির চিফ নার্সিং অ্যাডভাইজার তানজীনা পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ২৩ জুন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টা সাঈদ চৌধুরী, আইটি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস ও অফিস সহকারী আলামিনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় অধিকতর তদন্তের জন্য জেকেজির পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়। ওইদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের দুদিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ।

আরিফুল ও ডা. সাবরিনা

জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন ও তানজীনা দম্পতি দাবি করেন, জেকেজির সিইও আরিফুল হক তাদের এই কাজে বাধ্য করেছেন। চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর হুমায়ুনকে জেকেজিতে আটকে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কাজ করতে রাজি হলে তাকে ছাড়া হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করতো জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার–নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। তবে এসবের ধার ধারেনি জেকেজি হেলথকেয়ার। যা ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।

বিনামূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও একপর্যায়ে জেকেজি অর্থের সংকুলান করতে পারছিল না। তখন তারা বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এ দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা। গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তানজীনা পুলিশকে বলেছেন, সংগ্রহীত নমুনা তারা ফেলে দিতেন। এরপর নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্যাডে ফল লিখে তা মেইল করে পাঠিয়ে দিতেন।

ডা. সাবরিনা

জেকেজির সিইও আরিফুল হকের স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জেকেজির চেয়ারম্যান। তবে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। মূলত সরকারি ডাক্তার সাবরিনার হাত ধরেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি ভাগিয়ে নেয় অখ্যাত জেকেজি নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি পায়। তবে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা আর অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিলেন তারা।

তবে বলা বাহুল্য, স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্ট করলেও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের নয়। জানা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক চিকিৎসককে মারধর করেছিলেন আরিফ চৌধুরী। পরে এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করেন ডা. সাবরিনা। এ ছাড়া জেকেজির এক কর্মীকে অশালীন প্রস্তাব দেয়ার ঘটনায় গুলশান থানার আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তবে ডা. সাবরিনা সব সময়ই বিএমএর নেতার পরিচয় ভাঙিয়ে চলাফেরা করেন।

 

স্বামী আরিফ চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ডা. সাবরিনার নাম আলোচনায় উঠে আসে। এর মধ্যেই ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী দাবি করেন, নমুনা পরীক্ষা না করেও জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনার ভুয়া রিপোর্টের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছিল। ভয়াবহ এই অপকর্মে স্বামী জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে যাওয়ার ২০ দিন পর তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কাছে এমন দাবি করেন। সেই সঙ্গে তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন বলেও দাবি করেন।

ডা. সাবরিনা ও আরিফুল

তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরিফুল জেকেজিতে প্রতারণার সঙ্গে সাবরিনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। এরপরই ডা. সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (১২ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।