জীবনের শেষ সময়ে মেছবাহ উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান
ফরিদগঞ্জ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন। দীর্ঘ ৪১ বছর গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে এখন অবসরে। তার দুই ভাই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। তবে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তার কাজে ছিলেন সক্রিয়। তার এই সক্রিয় সহযোগিতা এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্মরণ করে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম নেই। যুদ্ধ শেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং সঠিকভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করার কারণে তার আপন দুই ভাই মোখলেছুর রহমান খান ও মুকবুল খান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় এসেছেন। কিন্তু মেছবাহ উদ্দিন সহজ সরল প্রকৃতির লোক হওয়ার কারণে সঠিক সময়ে কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় আসেন নি। এসব কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান আমলেও সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে তিনি নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান। এজন্যে তিনি তার সময়কার সহযোদ্ধা ও সরকারের নিকট সহযোগিতা কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মেছবাহ উদ্দিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একজন ব্যবসায়ী ও শিক্ষক ছিলেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রহিম খান বাড়ির বাসিন্দা মেছবাহ উদ্দিন খান। তার পিতার নাম মৃত মহররম খান ও মাতা মৃত আশ্রাবী বানু। শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্যে তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। তিনিসহ তাঁরা ৫ ভাই। এর মধ্যে রহিম খান, মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছ খান ও আব্দুল কাদির খান মারা গেছেন। এখন তিনিসহ আরো দুইজন বেঁচে আছেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল খান। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং ঢাকায় থাকেন।
মেছবাহ উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করে বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে একদিন মুক্তিবাহিনীর লোকজন গোয়াল ভাওর বাজারে আসেন। তখন তাদের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার পর তাদেরকে খাবার সংগ্রহ করে দেয়ার জন্যে বলেন। আমি তাৎক্ষণিক তাদেরকে শুকনো খাবার সংগ্রহ করে দেই। তারপর থেকে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সংগ্রহ, খাবার রান্নাসহ সকল কাজই আমার তত্ত্বাবধানে হয়। মুক্তিবাহিনীসহ যারা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আশ্রয় নেয়ার জন্যে এসেছেন তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। নৌকায় নদী পারাপার করার জন্যে আমার সহযোগিতা ছিলো। ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে যে অর্থ ব্যয় হতো, সে অর্থও আমার কাছে সংগ্রাম কমিটির ক্যাশিয়ার হিসেবে সংরক্ষিত থাকত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে পারিনি। শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে আমার জন্য হবে পরম পাওয়া এবং গর্ববোধ করতে পারবো। কারণ আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী পরিবারের সন্তান।
মেছবাহ উদ্দিনের ভাই মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল খান জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতার কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন মেছবাহ উদ্দিন। তিনি শিক্ষক হিসেবে একজন ন¤্র ও ভদ্র লোক। যুদ্ধের পরে একসময় বাজারে তার দোকানে ডাকাতি হওয়ার কারণে যুদ্ধকালীন তার অনেক প্রমাণপত্র হারিয়ে যায়। সে কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় আসতে বাধাগ্রস্ত হন। কিন্তু তার বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানেন।
ওই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম মৃধা বলেন, মেছবাহ উদ্দিন যুদ্ধকালীন সময়ে গোয়ালভাওর বাজারে থেকে মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর সকল কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিং না নিলেও কোনো কাজেই তার অবহেলা ছিলো না।
আরেক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, মিছবাহ উদ্দিন সংগ্রামের সময় আমাদের ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটির ক্যাশিয়ার ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি আমাদের সকল কাজে সহযোগিতা করেছেন। তার বড় ভাই আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মেছবাহ কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ায় তালিকায় আসেনি। এখন সরকার যদি তাকে তালিকায় আসার সুযোগ করে দেয়, তাহলে আমাদের কাছেও ভাল লাগবে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সহযোগিতা লাগলে করবো।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) বাচ্চু মিয়া ভাষানী বলেন, মেছবাহ উদ্দিন শিক্ষক হিসেবে এলাকায় যেমন সুনাম রয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার সহযোগিতা আমাদের জানা আছে। আমরা যখন তালিকা করি এবং কাগজপত্র জমা দিয়েছি, তখন তিনি কাগজপত্র দিতে পারেননি। সে কারণে তিনি তালিকায় আসেননি। পরবর্তীতে যখন নাম তালিকা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে, আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।