• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচর রক্ষার ব্লকবাঁধে ধস ॥ জালিয়ার চরেও মেঘনার ভাঙ্গন

প্রকাশ:  ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচরে আবারো মেঘনার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙ্গনে হাইমচর রক্ষার ব্লকবাঁধের কয়েক স্থান ধসে গেছে। ভাঙ্গন চলছে চরভৈরবী ইউনিয়নের জালিয়ার চরেও। সরজমিনে ভাঙ্গন পরিস্থিতি দেখতে গেলে স্থানীয়রা জানায়, নদীতে পানির চাপ বাড়ায় আমতলী এলাকার বাঁধে দেখা দিয়েছে এ ভাঙ্গন। এতে করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে  মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নদীর পাড় সংলগ্ন বসতভিটা। সে সঙ্গে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থে নির্মিত হাইমচর নদী রক্ষাবাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে।
চরভৈরবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মাস্টার জানান, তার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৪নং ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ব্লকবাঁধ দিয়েছে, নদীতে বর্ষার পানির চাপ বাড়ায় এ বাঁধের ২০/২৫টি জায়গা থেকে ব্লক নদীতে ধসে গেছে। সামনে উজানের পানির ঢল নামলে হাইমচরের নদী ভাঙ্গন আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
তিনি আরো জানান, আমতলী, উত্তর বগুলা, গাজীরনগর এলাকা দিয়ে ভাঙ্গন প্রবণতা বেশি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলায় আপাতত ভাঙছে না।
চরভৈরবীর বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ডাকু জানান, ‘ঢেউয়ে আমাদের এলাকা যাইতেছে গিয়া। প্রায় আধা মাইল লইয়া গেছে। জালিয়ার চরে এখন তীব্র ভাঙ্গন চলছে। মহসিন হাওলাদারের বাড়ির জায়গা জমি নদীতে নিয়া যাচ্ছে। চলমান চরভৈরবী কাটাখাল প্রকল্পের কাজ সেখানে করা হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান বলেন, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে পরবর্তী সময়ে পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদপুর সদরের ছয় কিলোমিটার এবং হাইমচরের সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী এলাকার ভাঙ্গন স্থান রক্ষায় আরসিসি ব্লকবাঁধ তৈরি করা হয়েছে। গত অর্থবছরের ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চরভৈরবী কাটাখাল এবং চাঁদপুর হরিণা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে হাইমচরের চরভৈরবী এলাকার আমতলীসহ হাইমচরের বিভিন্ন স্থানে ২ হাজার ৭শ’ মিটার বাঁধ এলাকায় গত দু’ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এখানে যে মেনটেনেন্সের প্রয়োজন ছিলো, তার বরাদ্দ আমরা পাইনি। হঠাৎ করেই গত কদিন ধরে পানির চাপ বাড়ায় আমতলী এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত তিন/চার দিনে এখানের প্রায় আড়াইশ’ মিটার এলাকা ভেঙ্গে গেছে।
এক সময় হাইমচরবাসীর দুঃখ ছিলো নদী ভাঙ্গন। প্রায় ৭০ বছর ধরে ভাঙ্গন ছিলো এ হাইমচরে। এতো দীর্ঘকাল ধরে একটি জনপদের নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয় ২০১০ সালে বর্তমান সরকারের আমলে। এ এলাকার সংসদ সদস্য তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ স্থায়ী বাঁধটি হয়। তখন কয়েকশ’ কোটি টাকায় এ বাঁধ নির্মাণ হয়। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষায় নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। ফলে এখন মূল বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা যায়, পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার সাথে লক্ষ্মীপুর জেলার দুটি উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয় ১৯৬৩ সালে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক নদী ভাঙ্গনে অনেকবার ভেঙ্গেছে এ বাঁধ। মেঘনার সর্বনাশা এ ভাঙ্গনে হাইমচর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের চারটি ইউনিয়ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মানচিত্রকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে।