সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করাও একটি অপরাধ : দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ
রোববার বিকেলে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদকে আমি চাকুরি করি না, এটা আমার কাজ। কাজকে ভালবাসি বলেই নিরলস কাজ করে চলছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাই হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। যে শিক্ষা আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে না, সেই শিক্ষা শিক্ষাই নয়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে শুধু পাস করার জন্যে স্কুলে পাঠায় না, তাদেরকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যেও পাঠায়। একটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাস করাই মুখ্য বিষয় নয়, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার মূলভিত্তি রয়েছে কিনা তা পরখ করা প্রয়োজন। আমাদের কাছে চাকুরির অভাব নেই, কিন্তু চাকুরি পাওয়ার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর অভাব রয়েছে। কিন্তু যারা প্রকৃত মেধাবী তাদের চাকুরির অভাব নেই। জনসম্পদ যেন জনআপদে পরিণত না হয় সেই ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। তাই শিক্ষকদেরকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করাও একটি অপরাধ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের সাথে আমার পরীক্ষা পাসের হার নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। আমি মনে করি, পরীক্ষায় পাসই মূল কথা নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষার একটি শক্ত ভিত। একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কী হবে তা আপনাদের উপর নির্ভর করে। তাই আমি শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা অন্তত এই শিক্ষার্থীদের এই ভিত তৈরি করে দিন। নচেৎ আপনারা জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবেন। আপনাদের বেতন নিয়ে কথা রয়েছে, আমি জানি। আমিও চাই আপনাদের বেতন বাড়ুক। শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে, তা না হলে আমরা শিক্ষিত জাতি কিভাবে পাবো।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক শিক্ষকই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি, তিনি কিভাবে তাঁর শিক্ষকদেরকে সম্মান করেন। রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা কয়েকদিন পূর্বে কিছু সুপারিশমালা প্রেরণ করেছি। সেই সময় রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করতে বলেছেন। আমরা ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছি, ২০১৯ সালে আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবো। প্রধান শিক্ষকরা হলো প্রকৃত নেতা। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন। দুদক আপনাদের পাশে রয়েছে। আমরা আপনাদের কর্মকা-ের উপর দৃষ্টি রাখবো। কেউ আপনাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে বাধা দিলে আপনারা ডিসিকে জানাবেন। আমরা তাকে চ্যাপ্টা করে দিবো। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, ক্লাসে সঠিকভাবে শ্রেণি শিক্ষা দিন। এক বিষয়ে ফেল করাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উঠানো চলবে না। আমার নিজ এলাকা যেহেতু ফরিদগঞ্জ, তাই চাই এখান থেকেই আমরা এ ব্যাপারে যাত্রা শুরু করবো।
উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলী আফরোজের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহাম্মদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এমসিকিউ সারা বিশে^ একটি স্বীকৃত পদ্ধতি হলেও আমরা বাংলাদেশে এই পদ্ধতিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে ফেলেছি। এর জন্যে শিক্ষক থেকে শুরু করে আমরা অনেকেই দায়ী। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষক, অভিভাবক , জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে নিজ নিজ স্থানে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। ব্যবস্থাপনা কমিটির বিষয়ে ইতিমধ্যেই পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছি। আমরা আগামী ৫ বছরে শিক্ষার মানোন্নয়নে সাড়ে ১৪হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যেখানে শুধু ওয়াশব্লক ছাড়া আর কোনো অবকাঠামোগত কাজ হবে না। গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। টিএসটি-এর মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের কতটুকু সময় দেয়, তা যাচাই করা হবে। তাদের সম্পর্ক আরো নিবিড় করার চেষ্টা করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহাম্মদ তার বক্তব্যে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু রয়েছে। এদেরকে সঠিকভাবে তৈরি করার দায়িত্ব শিক্ষকদের। শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে আরো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে কাজ করছি।