• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আবার বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার আশ্বাস মালয়েশিয়ার

প্রকাশ:  ১৪ মে ২০১৯, ২০:৪২ | আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ২১:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আবারও বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকে এ আশ্বাস পাওয়া গেছে। ৩০ ও ৩১ মে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।

আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠক সম্পর্কে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি দাতো সেরি উতামা মহিউদ্দিন ইয়াসিন এবং মানবসম্পদমন্ত্রী তান কুলাসেগারানের সঙ্গে তাঁদের কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় আলাদা বৈঠক করেন প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ।বৈঠকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার শিগগিরই উন্মুক্ত হবে বলে উভয় পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। এ ছাড়াও বৈঠকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে অর্থবহ আলোচনা হয়েছে।বর্তমানে স্থগিত থাকা শ্রমবাজারকে উন্মুক্ত করা প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী তান কুলাসেগারান বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তার সরকার সব সময় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। শিগগিরই বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হবে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ থেকে ৩১ মে একটি দ্বিপক্ষীয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রমবাজার প্রসঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় করণীয় নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় পক্ষই মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত বিদেশি কর্মীদের হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হওয়াসহ নানা সমস্যা দ্রুত সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার আরও সুদৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা করতে প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ শনিবার মালয়েশিয়ায় গেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় আট মাসেরও বেশি সময় ধরে নতুন কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। এতে অন্তত এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়া চালু করতে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) একাধিকবার বৈঠক করলেও সংকটের সুরাহা হয়নি। অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়া সরকারের গঠিত স্বাধীন কমিটি ইতিমধ্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে উচ্চ আদালত ছয় মাসের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হয়ে গেছে। এখন মন্ত্রণালয় সময় বাড়ানোর আবেদন করবে বলে জানা গেছে। গত বছর মাঠে নামলেও থমকে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান। বরং পুনরায় এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে ওই সংঘবদ্ধ চক্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত বছর একতরফা ও অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। এই ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিতি পায়। এর সঙ্গে জড়িত দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি লোকজন। এই চক্রের বিরুদ্ধে সরকারি খরচের অতিরিক্ত ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে কোনো বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে এর আগে ভিসা পাওয়া কর্মীরা সেপ্টেম্বরের পরও মালয়েশিয়া গেছেন। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন।গত বছরের প্রথম তিন মাসে কর্মী গেছেন ৩৮ হাজার ৮৬৫ জন। এ বছরের প্রথম তিন মাসে গেছেন মাত্র ৫৫ জন। অথচ গত বছর প্রতি মাসে গড়ে কর্মী গেছেন প্রায় ১৫ হাজার। এ হিসাবে বাজার চালু থাকলে গত ৮ মাসে নতুন করে এক লাখের বেশি কর্মী চাকরি পেতেন বলে মনে করেন শ্রমবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে এখন বাজার চালু করায় সরকারের মনোযোগ বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।

সর্বাধিক পঠিত