• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

সোহাগের স্ত্রীর আহাজারি

এভাবে মানুষ মানুষকে মারতে পারে!

প্রকাশ:  ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

‘সবাই চেয়ে চেয়ে দেখল, একটা মানুষকে কীভাবে মারতেছে। কেউ একটু হেল্প করে নাই। এভাবে কি একটা মানুষকে মারতে পারে! সারাটা জীবন আমার চোখের জল ফেলতে হবে। সন্তানদের নিয়ে সারাটা জীবন কীভাবে পার করব?’ স্বামীর কবরে হুমড়ি খেয়ে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নিহত লাল চাঁদ সোহাগের স্ত্রী লাকী বেগম। এ সময় বাবার কবরের পাশে নির্বাক ও অশ্রুসজল চোখে দাঁড়িয়েছিল সোহাগের দুই ছেলেমেয়ে। তাদের ভাষ্য, আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবাকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে। আমার বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গত বুধবার রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাকারীরা সোহাগের মরদেহে ওঠে পৈশাচিক নৃত্য শুরু করে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্তব্ধ হয়ে পুরো জাতি। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় তারা।বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নানাবাড়িতে শুক্রবার সকালে দাফন করা হয়েছে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে।
সোহাগের দুই সন্তান রয়েছে। মেয়ে সোহানা (১৪) ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছেলে সোহান (১১) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুরুতে অন্যের অধীনে কাজ করলেও পাঁচ বছর ধরে নিজেই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। গতকাল শনিবার নিহত সোহাগের বরগুনার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘মাহিনসহ এজাহারভুক্ত আসামিরা মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সোহাগ আসামিদের দাবি করা চাঁদা টাকা না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে মোবাইল ফোনে দোকানে ডেকে নিয়ে প্রথমে তাকে দোকানে বসেই মারধর করে, চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তার পরিহিত কাপড় ছিঁড়ে ফেলে শুধু অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে রাস্তার ওপরেই পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।’
তিনি অভিযোগ করে জানান, স্বামীকে এভাবে হত্যা করার পরও থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ বারবার থানায় ডেকে নিয়ে এজাহারের দরখাস্ত পরিবর্তন করেছে। এমনকি সোহাগের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়ার পর অদৃশ্য কারণে মরদেহ অনেক সময় পরে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম ভাইয়ের কবরের কাছে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাই আমার চোখের মনি ছিল। কোনোদিন ভাইকে কষ্ট পেতে দিই নাই। এর আগে মা মইরা গেল, এখন ভাইটাকেও খাইয়া দিল। আমার ভাইকে এমনভাবে কষ্ট দিয়ে মারছে। এটা কোনো মানষের কাম! ওরা পশু।’ এদিকে সোহাগের স্বজনরা জানান, গ্রেপ্তার আসামি মাহমুদুল হাসান মাহিনের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সোহাগের। একজন আরেকজনের বাসায় যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া করত। মাহিনের বাসার খরচসহ চলার খরচও বহন করত সোহাগ।
বরগুনায় মানববন্ধন: সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা সদর রোডে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানবন্ধনে বরগুনা প্রেস ক্লাব, মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বরগুনা জেলা শাখার সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

 

সর্বাধিক পঠিত