ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। সোমবার সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছার পর তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের প্রধান ইশরাত জাহান। এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) যোগ দেবেন বিক্রম মিশ্রি। সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কে একধরনের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতনের বিষয়ে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে দুদেশ। টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনাবসানের পর দেশ ছেড়ে ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংক্ষিপ্ত নোটিসের অনুরোধে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা ভারত সরকার জানালেও তার 'স্ট্যাটাস'নিয়ে কিছু বলেনি তারা।
এর মধ্যে বাংলাদেশে দুই শতাধিক মামলায় মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। দলীয় প্রধানের মতো আওয়ামী লীগের নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কিংবা আত্মগোপনে আছেন। জুলাই-অগাস্টে 'গণহত্যার' অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ার কথা বলে আসছে অধ্যাপক ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে 'সংঘবদ্ধ', 'অতিরঞ্জিত' ও 'বিকৃত' তথ্য পরিবেশনের অভিযোগ করা হচ্ছে সরকারের তরফে। এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর পর দুদেশ পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে। চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ভারতে, বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। এমন একটি বিক্ষোভ থেকে ২ ডিসেম্বর ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়।
'হিন্দু সংঘার্ষ সমিতি' নামে ডানপন্থি সংগঠনের ব্যানারে ওই হামলায় বাংলাদেশ মিশনে ভাংচুর ও পতাকা নামিয়ে টানাহেঁচড়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে 'গভীরভাবে দুঃখজনক' হিসাবে অভিহিত করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, হামলা ছিল 'পূর্বপরিকল্পিত' এবং ঘটনার সময় পুলিশ'সক্রিয় ছিল না'। আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। ঘটনার পরদিন ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক পর্যালোচনায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম এফওসি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে সর্বশেষ এফওসি হওয়ায় পরের বৈঠক ঢাকাতে হচ্ছে।