পর্তুগালে রাষ্ট্রদূত হওয়া হচ্ছে ‘না’ মাহফুজুল হকের
সাবেক সচিব এম মাহফুজুল হককে পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগাম তথ্য খোলাসা করে দেওয়ায় রাষ্ট্রদূতের এগ্রিমো (নিয়োগের প্রস্তাব) চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে দেশের নাম উল্লেখ করার তথ্য জানতে পেরেছে পর্তুগাল। গোপনীয়তার ব্যত্যয় ঘটায় বিব্রত হয়েছে দেশটি। ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সাবেক সচিব মাহফুজুল হককে পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করার বিষয়ে জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপন থেকে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই সংবাদটি কূটনৈতিক চ্যানেলে জানতে পেরেছে পর্তুগাল। এগ্রিমো চাওয়ার আগে সুনির্দিষ্টভাবে দেশের নাম উল্লেখ করায় দেশটি বিব্রত হয়েছে। এভাবে দেশের নাম উল্লেখ করায় পর্তুগালের প্রটোকল বা রাষ্ট্রাচার দপ্তর (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে) লিসবনের বাংলাদেশ মিশনকে বিষয়টি অবহিত করেছে। সেই তথ্য সম্প্রতি সদর দপ্তর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে লিসবনের বাংলাদেশ মিশন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এগ্রিমো আসার বা চাওয়ার আগে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করে ওই দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সরকারি ঘোষণা প্রেরণ এবং গ্রহণ করা উভয় দেশের জন্যই অস্বস্তিকর। সাবেক সচিব মাহফুজুল হককে পর্তুগালে রাষ্ট্রদূত করতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, এটা তারা করতে পারে না। পর্তুগাল আপত্তি জানাতে পারে। কারণ, তাকে আমি না বলার আগে তুমি কীভাবে বলে দাও রাষ্ট্রদূত হবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিয়ম হচ্ছে আগে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হবে সে কোন দেশে যাবে। এই সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ অনুমোদন হওয়ার পরে গোপনে স্বাগতিক দেশের বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে যাকে দূত করার প্রস্তাব পাঠানো হয় সেটি ওই দেশের সরকারকে জানানো হয়। তারা দুই থেকে তিন মাস সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে যদি হ্যাঁ বলে তখন সেটা হয় এগ্রিমো। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটা অর্ডার হয়। পর্তুগাল সরকার যদি তাকে গ্রহণ না করে তাহলে আমাদের মানসম্মান থাকে।
সরকারের পালাবদলের পর প্রশাসনে রদবদলের অংশ হিসেবে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে জ্যেষ্ঠ সচিব মাহফুজুল হককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে তাকে তিন বছরের জন্য সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। পরে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের জন্য তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। মাহফুজুল ২০০৮-২০০৯ সালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্বে পালন করেন।
গত ১ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ এক অফিস আদেশে পর্তুগালে (লিসবন) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদকে বর্তমান দায়িত্ব ছেড়ে ‘অনতিবিলম্বে’ ঢাকায় সদর দপ্তরে ফেরার নির্দেশনা দেয়। বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা রেজিনা আহমেদ আগামী ১৩ ডিসেম্বর অবসর–উত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, যেসব দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নেই, সেসব দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে কিছু দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।