মতলব উত্তরে দেশীয় অস্ত্রসহ দু ডাকাত সদস্য গ্রেফতার
মতলব উত্তর উপজেলার মানুষ ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। ১৬ আগস্ট শুক্রবার রাত ৯/১০টার পর থেকে পুরো উপজেলায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে গজরা ইউনিয়নের ডুবগী এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে জনতা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে--এ বিষয়ে ফেসবুক ও মসজিদের মাইকে প্রচার হতে থাকে। এতে পুরো উপজেলায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এ সময় ঘর থেকে বের হয়ে নিজ নিজ এলাকা পাহারা দিতে থাকে।
আটককৃত ডাকাতরা হলো : মোঃ রাজিব হোসেন (৩৪) ও মোঃ রিপন (৩৫)। মোঃ রাজিব হোসেন ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের মোঃ শফিকুল আলমের ছেলে ও মোঃ রিপন মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের ডুবগী গ্রামের মৃত হরমুজ আলী কুট্টির ছেলে। তাদের হেফাজত থেকে ১টি লোহার রড (লম্বা ২ ফুট ১০ ইঞ্চি), ১টি রাম দা (লম্বা বাঁটসহ ২ ফুট ১০ইঞ্চি, যার এক পাশ ধারালো ও মাথা বাঁকা), ১টি লোহার হ্যামার (লম্বা ১ফুট ৭ ইঞ্চি, যার একপাশ ৫ ইঞ্চি চওড়া লোহার অংশ), ১টি লোহার কাটার ( লম্বা ২ ফুট ২ ইঞ্চি, যার এক পাশে গোলাকৃতি চওড়া ৭ ইঞ্চি), ১টি প্লাস্টিকের বাঁটযুক্ত ছুরি ( বাঁটসহ ১০ ইঞ্চি লম্বা) উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে গজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ বেলাল হোসেন মেম্বার বাদী হয়ে থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। আটককৃত মোঃ রাজিব হোসেন ও মোঃ রিপনের বিরুদ্ধে থানার এফআইআর নং-০৪, তারিখ-১৭ আগস্ট, ধারা-৩৯৯/৪০২ পেনাল কোডে রুজু করা হয় বলে স্বীকার করেছে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে হঠাৎ ডাকাত আতঙ্কের কথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারা রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেন। তারা রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জেগে থেকেছেন।
মতলব উত্তরে ডাকাতি রোধে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীও। রাত ৮টার পর সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা। উপজেলায় সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। মতলব উত্তর থানা পুলিশও টহল জোরদার করেছে।
শুক্রবার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা, মোহনপুর, ফতেপুর পশ্চিম ও পূর্ব, ষাটনল, সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, যুবকরা তাদের প্রতিবেশীসহ নিজের বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। তারা জানান, চারদিকে বিচ্ছিন্ন ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তাই নিজেদের বাড়িঘর রক্ষা করতে তারা নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। পাহারা দেওয়ার জন্যে তারা গ্রুপ তৈরি করেছেন। একেকটি গ্রুপে রয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। কোথাও কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি শুনলে কিংবা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলে তারা সবাই সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন।
এ ব্যাপারে আদুরভিটি গ্রামের যুবক সফিকুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকার বাড়ি-ঘরসহ পরিবারের লোকজনের সুরক্ষার জন্যে তারা নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। রাত ১১টার পর এলাকায় অপরিচিত লোক এলে তার পরিচয় নিশ্চিত করে তাকে এলাকায় ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে।
মাথাভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা দৌলত হোসেন জানান, তাদের এলাকার বাড়িঘর রক্ষা করার জন্যে তারা একটানা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ডাকাতির চেয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে বেশি। তাই এলাকার লোকজনের মাঝে আতঙ্ক রয়েছে।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ডাকাত ঢুকেছে এ বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন মিডিয়া ব্যবহার করে অবগত করতে থাকি। এলাকাবাসী নিজ নিজ এলাকা পাহারা দিতে থাকে
উপজেলায় নজরদারিসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে পুলিশ ছুটে যাচ্ছে। আইন অমান্যকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। আটককৃত দুজনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপরাধ নির্মূলে থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।