প্রশ্ন ফাঁস: স্বীকারোক্তিতে আরও অনেকের নাম বলেছে আবেদ আলী
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী স্বীকারোক্তিতে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নাম বলেছে। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। তথ্য যাচাই করে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেলে প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে। সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়া ১১ আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদুর রহমান আজ বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি তদন্তে এরই মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ’
আবেদ আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে সিআইডি সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিসিএস প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তবে ২৪তম ব্যাচে এর (প্রশ্ন ফাঁসের) ব্যাপকতা বাড়ে। ২৫তম ব্যাচের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে তিনিসহ আরো অনেকে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে পিএসসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের আরো অনেকের গাড়ি চালিয়েছেন তিনি।
তাদের অনেকেই প্রশ্ন ফাঁসের কোটি কোটি টাকা নিয়েছে বলে সিআইডিকে জানিয়েছেন আবেদ আলী।
সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসেও জড়িত আছেন আবেদ আলী। ফাঁসকৃত প্রশ্ন রাজধানী এবং নীলফামারীর একটি স্থানে প্রার্থীদের পড়ানো হতো বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি পিএসসির অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে চক্রটি।
স্বীকারোক্তিতে আবেদ আলী বলেছেন, তার অন্যতম সহকারী পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।
ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমানকে নিয়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহের পর সাজেদুল দিতেন আবেদকে। সর্বশেষ রেলের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের জন্য এক কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল তার। তবে পেয়েছেন ৭৫ লাখ টাকা। এরপর চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে সেই প্রশ্ন যায় নির্ধারিত পরীক্ষার্থীর হাতে।
পিএসসির অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন সময় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এদের মধ্যে আবেদ আলীসহ ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গতকাল মঙ্গলবার। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে পিএসসির দাবি, আবেদ আলী কখনো পিএসসির কোনো চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। তিনি পিএসসির তিনজন সদস্য এবং একজন যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন।
পিএসসির তথ্য অনুযায়ী, চাকরিজীবনে আবেদ আলী পিএসসির সদস্য মজিবুর রহমান বিশ্বাস, মোজাম্মেল হক ও মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাতের গাড়ি চালিয়েছেন। এ ছাড়া একজন যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন তিনি। তবে যুগ্ম সচিবের নাম উল্লেখ করেনি পিএসসি।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলী ১৯৯৭ সালে গাড়িচালক হিসেবে পিএসসিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি তিনজনের গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর ৩(বি) এবং ৩(ডি) ধারায় আনীত অভিযোগসমূহ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে চাকরি হতে অপসারণ করা হয়।