• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে যে জাতীয় মানের বিতর্ক হতে পারে সেটা না আসলে বুঝতে পারতাম না

--------------সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ

প্রকাশ:  ০৯ জুন ২০২৪, ১১:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি একজন সচিব যখন বলেন, ‘আমি বিস্মিত, আমি অভিভূত। চাঁদপুরে যে এমন জাতীয় মানের বিতর্ক হতে পারে সেটা আমি আজকে এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। এমন উচ্চমার্গীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্ভব হয়েছে কামরুল হাসান শায়কের মতো পৃষ্ঠপোষক আর কাজী শাহাদাতের মতো নিষ্ঠাবান বিতর্ক শ্রমিকের কারণে।’ এমন উচ্ছ্বসিত বক্তব্যই বলে দেয় আয়োজন কতোটা সফল হয়েছে।
‘বিতর্কে আজ নতুন জোয়ার, যুক্তিতে যুগ খুললো দুয়ার’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ৮ জুন চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার এক যুগপূর্তির উল্লাস তথা ফাইনাল পর্বের জমজমাট বিতর্ক। এই আয়োজনের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ তাঁর বক্তব্যে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
বিতর্ক শিল্পকে ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে একটি যুক্তিবাদী তারুণ্য দীপ্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গত দেড় যুগ যাবৎ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ-এর পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এই বিতর্ক উৎসবের আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
চাঁদপুর জেলা সদরসহ ৮ উপজেলা থেকে দেড়শ’ বিতর্ক দল এতে অংশগ্রহণ করে। সনাতনী ধারায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ এবং সংসদীয় ধারা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ মোট পাঁচটি গ্রুপে বিতর্ক হয় উল্লাস পর্বে। গতকাল ৮ জুন সকাল ৭টায় শুরু হয়ে বিরামহীনভাবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে এই উল্লাস পর্ব এবং পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রথমবারের মতো পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এছাড়া প্রান্তিক তথা বাছাই পর্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসা চাঁদপুর জেলার সেরা দলগুলো অংশ নেয়। সেজন্যে ফাইনাল পর্বটি বেশ জমজমাট ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার এ আয়োজনটিতে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতনামা অতিথিদের পাশাপাশি চাঁদপুরের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার যুগপূর্তির উল্লাস পর্বে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের মাঝে সার্টিফিকেটসহ নগদ অর্থ ও বই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধান অতিথি এসব তুলে দেন বিতার্কিকদের হাতে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রধান পৃষ্ঠপোষক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ-এর প্রকাশক কামরুল হাসান শায়কের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একরামুল ছিদ্দিক ও চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সব্যসাচী লেখক ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসান, ফলাফল ঘোষণা করেন সিকেডিএফ-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে।
চাঁদপুর কণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক অধ্যাপিকা বিলকিস আজিজ, চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা প্রধান এএইচএম আহসান উল্লাহ, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ নূর খানসহ দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও উৎসব সংশ্লিষ্ট অংশীজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ বলেন, চাঁদপুরে এসে আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমি বিস্মিত, অভিভূত। আপনারা এই এলাকার বুদ্ধিজীবী, জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পাবার মতো যোগ্য। আপনাদের কারণে আজকে এত বড় বিতর্কের আয়োজন সম্ভব হয়েছে।
তিনি তাঁর অন্যরকম অনুভবের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে গানের সুরে বলেন, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। শাখে শাখে পাখি ডাকে কত শোভা চারি পাশে...’। ঘরের বাঁধন ছেড়ে মেয়েরা হয়েছে স্বাধীন। তিনি বলেন, ইংরেজি এবং বাংলায় মনোমুগ্ধকর বিতর্ক উপস্থাপনা আমি চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখেছি! তাদের মাঝে কত যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখতে পেলাম! সত্যিই আমি মুগ্ধ, অভিভূত এবং অসম্ভব খুশি হয়েছি।
সচিব বলেন, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। আমার সামনে এই যে কত ইলিশ। তোমরাই তো চাঁদপুরের অতি মূল্যবান  ইলিশ, তোমরাই এই মাটির উচ্চমূল্যের ইলিশ। তোমরাই চাঁদপুরের ভবিষ্যৎ।
এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের পারফর্ম দেখে সত্যজিৎ রায়ের লেখা, অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে বিখ্যাত গানটির কথা আমার মনে পড়ে গেল। কারণ তোমাদের পাশে পাঞ্জেরী আছে। তাইতো বলি, পাঞ্জেরী, রাত পোহাবার কত দেরি ? এখন দেখি পাঞ্জেরীর রাত কিন্তু চলে গেছে, ভোর দেখা যাচ্ছে। এই চাঁদপুরের সন্তানদের বিতর্কের মাধ্যমে যে উপস্থাপনা এবং প্রমিত উচ্চারণ স্কুল পর্যায়ে দেখলাম, তাতে আমি অভিভূত। আমার চেষ্টা থাকবে সারাদেশে পাবলিক লাইব্রেরির মাধ্যমে বিতর্কের আয়োজন করা এবং উচ্চারণে পরিবর্তন আনা।
সচিব খলিল আহমদ আরো বলেন, এই বিতর্ক উৎসবের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু ধারণা নিয়ে গেলাম। বাংলা একাডেমির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের সকল জেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কবিতা প্রবন্ধ লিখবে। তাদের লেখা প্রবন্ধ জাতীয় পর্যায়ে ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশ করা হবে ৬৪টি জেলার জন্যে আলাদা আলাদা করে। এমনকি জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাঁদপুর কণ্ঠের এই বিতর্ক আয়োজনকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরো এগিয়ে নেয়া যায় কিনা তার উদ্যোগ নেয়া হবে।
জনাব খলিল আহমদ আরো বলেন, আমরা বিশ^াস করি, এই তরুণ শিক্ষার্থীরা বিতর্কের মাধ্যমে নিজেদের শাণিত করে যুক্তিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং আগামীতে দেশকে মেধা ও যুক্তির সমন্বয়ে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেবে।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিয়েছে এবং চ্যাম্পিয়ন রানারআপ হয়েছে তাদেরকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান প্রধান অতিথি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বলেন, এই বিতর্ক আয়োজনে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে তারাই তো আমাদের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এদের মাধ্যমেই আমরা স্মার্ট নাগরিক পাবো, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ঘরে তুলতে পারবো।
তিনি পাঞ্জেরী ও চাঁদপুর কণ্ঠকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে এটা নির্ভর করবে বর্তমানকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছি তার উপর। আর ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে আমাদের অতীতকে আমরা যদি ভালোভাবে জানি। তা না হলে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারবো না। আমাদের অতীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীরা এবং আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বলে, সংগ্রাম করেছেন বলে, আজকে আমাদের বর্তমানটা এত সুন্দর হয়েছে। আমরা একটা বাংলাদেশ পেয়েছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আগামী বছরের তথা ২০২৫ সালের বিতর্ক প্রতিযোগিতার স্লোগান ‘স্মার্ট যুক্তি স্মার্ট দেশ, মুক্তবুদ্ধির বাংলাদেশ’-এর রিফ্লেকশন মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ।

 

সর্বাধিক পঠিত