চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরিচিতি সভা ও নবীনবরণ
শীঘ্রই মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু হবে
-------------------------সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
পরিচিতি সভা ও নবীনবরণের মাধ্যমে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ ব্যাচের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৫ জুন বুধবার কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের লেকচার হলে এই নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ আমার কাছে স্বপ্নের মতো এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে এক বিশাল জনসভায় বলেছিলেন চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ করে দিবেন এবং তা দিয়েছেন। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একনেকের সভায় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। খুব শীঘ্রই মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বর্তমানে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম ব্যাচের চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা চলছে। কয়েক মাস পর এখান থেকে একঝাঁক তরুণ চিকিৎসক চাঁদপুরে চিকিৎসা প্রদান করবে।
তিনি আরো বলেন, ছেলেদের জন্যে বাসা ভাড়া করে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং একাডেমিক ভবনের জন্যে নতুন বাসা ভাড়া করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন একাডেমিক ভবনে লাইব্রেরী এবং ল্যাবরেটরির সুবিধা নেয়া সহজ হবে, এতে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে এবং চাঁদপুরের মানুষ উপকৃত হবে।
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, চিকিৎসক হওয়া সহজ নয়, পড়াশোনা কিছুটা কষ্টকর। যে ব্রত নিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া তা যেন বজায় রাখে। মেডিকেল পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বে নিজেকে তৈরি করা। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সময় শত প্রতিকূলতা পার করতে হবে। চিকিৎসক হয়ে দেশ, জাতি এবং মানব কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী।
তিনি বলেন, তোমরাও চাঁদপুরের সোনার মানুষ হবে। তোমরা চাঁদপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের একজন অংশীদার হয়ে থাকবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তৈরি করবে। কিশোর গ্যাং, মারামারি থেকে দূরে থাকবে। শিক্ষকদের নির্দেশ মতো পড়াশোনা করবে। আশা করি তোমরা সকলেই জাতির কল্যাণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের যে কোনো সুখে দুঃখে চাঁদপুর পৌরসভা আছে এবং থাকবে। শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে পৌরসভা কাজ করে যাবে। চিকিৎসক পেশা পৃথিবীতে একমাত্র পেশা যা সরাসরি মানুষের পাশে থেকে কাজ করা যায়। এই পেশা যত বিস্তৃত হবে মানুষ তত সরাসরি উপকৃত হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ একটি নতুন মেডিকেল কলেজ। নতুন মেডিকেল কলেজ হিসেবে অনেক কিছুই পরিপূর্ণভাবে নেই। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব পাশে থেকে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্যে। সবসময় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সাথে ছিলাম এবং থাকবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক (গাইনী ও প্রসূতি) ডাঃ সাহেলা নাজনীন। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে খুব দ্রুত আবাসনসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করছি। ইতিমধ্যে একাডেমিক ভবন এবং ছাত্রীদের জন্যে হোস্টেল ভাড়া নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পূর্বে আমাদের শিক্ষক সঙ্কট ছিলো, বর্তমানে প্রায় ৫৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় সাথে সাথে শিক্ষকদের অবহিত করতে হবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিতে হবে। তারা কার সাথে চলাফেরা করছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী) ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালো চিকিৎসক হওয়ার পূর্বে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা অনেক দায়িত্ববান। দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ান, যার ফলে পেশাগত পরীক্ষা সাফল্যের সাথে শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন নবী মাছুম, সহযোগী অধ্যাপক (প্যাথলজি) ডাঃ মিজানুর রহমান মিজান, সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডাঃ সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী সোহেল, সহকারী অধ্যাপক (কমিউনিটি মেডিসিন) ডাঃ নারায়ণ চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক (বায়োকেমিস্ট্রি) ডাঃ নূরুল আলম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ, কাজী সাউদা এবং নবীণ শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা বক্তব্য রাখেন।
ডাঃ মাসরুবা গুলশান এবং ডাঃ তামজিদ আহমেদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করেন ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক, গীতা পাঠ করেন ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৃষা রায়, ত্রিপিটক পাঠ করেন ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী কৃতিত্ব চাকমা। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে প্রথমে অতিথিরা নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করেন নেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।