বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যেনো বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করি : সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে এ দেশ স্বাধীনতা পেতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্মই ছিলো শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জন্যে। মজুতদারির বিরুদ্ধে, অসৎ মানুষের বিরুদ্ধে। আজকে আমরা নানা রকম সংকটের কথা পত্রিকায়-টেলিভিশনে দেখছি। তারা যদি বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো শুনে, আজকে তারা যে অন্যায় করছে, অতিরিক্ত মুনাফা করছে, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, তারা যদি বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো অনুসরণ করতো তাহলে এগুলো ঘটতে পারতো না। কাজেই আমাদের সবাইকে যার যার নিজের জায়গা থেকে, শুধু রাজনৈতিক মঞ্চে নয়, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই আমরা পারবো তাঁর রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় গড়তে।
রোববার (১৭ মার্চ) সকালে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে’ এ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
মন্ত্রী বলেন, পিতার মতো সততার সাহস নিয়ে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দেশের জনগণের জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটালে পরিণত করেছেন, মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ করেছেন। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পথে আমরা হাঁটছি। এই বাংলাদেশকে স্মার্ট, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরাও তাঁর সহযাত্রী হতে চাই। এজন্যে বারবার বঙ্গবন্ধুর জীবনের কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডে যেটা ভুলে যাই, সেটা হচ্ছে তারা মনে করে একজন মানুষকে হত্যা করলেই তাঁর আদর্শকে হত্যা করা যাবে। কিন্তু মানুষকে হত্যা করা যায়, তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শকে হত্যা করা যায় না। যে কারণে আজও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। আমরা আজ তাঁর কন্যার নেতৃত্বে তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যে কাজ করে চলছি।
দীপু মনি বলেন, আমাদের পথ দেখাবে তাঁর আদর্শ। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক উদার মানবতাবাদী, সুখী, শান্তিময়, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত স্বাধীন স্বদেশ নির্মাণ করতে এবং আত্মমর্যাদাশীল স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তিনি সোনার মানুষ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আর নতুন প্রজন্মই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার মানুষ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চাঁদপুর জেলা ইউনিটের নির্বাচিত কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সব্যসাচী লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, উপদেষ্টা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সালাউদ্দিন, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রণজিত রায় চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাংবাদিক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবু। আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসন ও শিশু একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ অন্য অতিথিরা। এর পূর্বে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের নিয়ে কেক কাটেন মন্ত্রী। একই সাথে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চাঁদপুর কালেক্টরেট জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোশারফ হোসেন। সবশেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল ৯টায় জাতির পিতার প্রতি চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমীতে গিয়ে শেষ হয়।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, বিশ্বে যুগে যুগে কালে কালে এমন কিছু মহামানবের জন্ম হয়, যাঁরা দেশ-জাতি-সমাজের জন্যে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যান। এই সব মহামানবদের মৃত্যু নেই, লয় নেই, ক্ষয় নেই। ঠিক তেমন একজন মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিলো অগাধ স্নেহ। শিশু-কিশোরদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা প্রদানই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
অতঃপর জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনে চাঁদপুর সরকারি শিশু পরিবারে বৃক্ষরোপণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ, দোয়া মাহফিল ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত প্রথম দিবসের অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়।