• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধন ও নৌ র‌্যালি

কারেন্ট জাল তৈরির উৎসমূল নির্মূল করা হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

চাঁদপুরে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউট চাই : সমাজকল্যাণমন্ত্রী

প্রকাশ:  ১২ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’ এই স্লোগান নিয়ে চাঁদপুরে উদ্বোধন হলো জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪। সেই সাথে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাটকা না ধরতে ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালিও করা হয়। ১১ মার্চ সোমবার চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মইন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএইচএম কবির আহমেদ, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে হাজারও জেলে উপস্থিত ছিলেন।  
মৎস্যজীবী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহআলম মল্লিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান বলেছেন, কারেন্ট জাল উৎপাদন হয় বলেই জেলেরা তা ব্যবহারের সুযোগ পায়। তাই কারেন্ট জালের উৎসমূল নির্মূল করতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদনের খোয়ারগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে। এই কাজটি প্রশাসনকেই করতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এই অনুষ্ঠান মূলত একটি সচেতনতামূলক সামাজিক ক্যাম্পেইন। যার মূল লক্ষ্যই হলো মানুষকে জাগ্রত করা। শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। এটি যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এই ভরা যৌবনের চাঁদপুর আবারো ইলিশের যৌবনে ভরে যাবে। যা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  স্মার্ট-বাংলাদেশ গড়া বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। অথচ অবৈধভাবে জাটকা আহরণের নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করে থাকে। জাটকা ধরার সাথে জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো, জাটকা ধরলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা কারেন্ট জালসহ অবৈধ জাল ব্যবহার করে জাটকাসহ রেণুপোনা ধরে ফেলে তারা সমাজ ও দেশের শত্রু। দেশের মৎস্য সম্পদের যারা শত্রু তাদের ব্যাপারে কোনো তদবির শোনা হবে না এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর ১১ মার্চ হতে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্যাপনের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বসাধারণকে বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন।
মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলিশসহ সকল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সাথে জড়িত মৎস্য চাষী, জেলে/মৎস্যজীবীর জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭১ লক্ষ মেট্রিক টনে, যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১.৯৯ লাখ মে. টন।
দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ ভাগ ইলিশ থেকে আসে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও এ সম্পদের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, জনবান্ধব এ সরকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তরসহ মাঠ প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি ‘জাটকা সংরক্ষণ অভিযান’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজনীয় লোকবল, নৌযানসহ প্রয়োজনীয় রসদের স্বল্পতা এবং অভিযানে নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন করছেন।
মন্ত্রী বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যে উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর (গরু), ছাগল, ভ্যান বিতরণসহ ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্যে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্প মেয়াদে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও উপকূল-মোহনা তীরবর্তী ৩১৭০০ সুফলভোগী জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে জাটকা নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। জাটকা আহরণ বন্ধে অভিযান জোরদারকরণের পাশাপাশি দেশের সকলকে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্যে আরো সহজলভ্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, আর এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশের সকল মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ যেমন পৌঁছে দিতে চাই, তেমনি দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই।
এ লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে আপামর জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণের জন্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে তার জন্যে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমার এলাকার জেলেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার এটাও সত্য কিছু জেলে আইন ও নিয়ম মানে না। সরকার যেমন ছেলেদের প্রয়োজন দেখবে, তেমনি জেলেরাও তাদের ভবিষ্যৎ ও বর্তমান স্বার্থে দেশের ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে আইন মানতে হবে, নিয়ম মেনে মাছ ধরতে হবে।
তিনি বলেন, জাটকার জন্যে ক্ষতিকারক কারেন্ট জালের উৎপাদনের আসল গোড়ার জায়গাটা ধরতে হবে। বেআইনী জাল উৎপাদন করতে না পারলে এর ব্যবহার জেলেরা করতে পারবে না। তিনি চাঁদপুরে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউট করার দাবি  জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর।

সর্বাধিক পঠিত