• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রিতেই মুনাফা দেখছেন ফরিদগঞ্জের শাহ আলম

প্রকাশ:  ১১ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গত ১৫ বছর ধরে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের মধ্য চরকুমিরা গ্রামের চাইলতাতলা বাজারে ছোট একটি মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন শাহ আলম (৪০)। হঠাৎ করেই ২০২৩ সালে মাহে রমজানের সময়ে তার মনে হলো এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের জন্যে নামমাত্র মূল্যে তিনি নিত্যপণ্য ও ইফতার সামগ্রী বিক্রি করবেন। যেই কথা সেই কাজ। ২০২৩ সালে তিনি এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি আশাতীত সাফল্য পেয়ে যান। যেখানে পূর্ববর্তী বছর রমজানের সময়ে মোটামুটি যতোটুকু বিক্রি হতো, সেখানে ৪-৫ হাজার কেজি পণ্য বেশি বিক্রি করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের মাহে রমজানের ১৫দিন পূর্ব থেকে তিনি এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করেন। এবারো সাড়া পেয়েছেন আরো ব্যাপক। ১০ মার্চ রোববার পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কেজি মালামাল বিক্রি করেছেন। গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার পর বিদেশ থেকেও তার কাছে অর্ডার আসছে। তিনিও অর্ডার নিয়ে বাড়িতে মালামাল পৌঁছে দিচ্ছেন।
চরকুমিরা তালতলা মার্কেটের শাহ আলম স্টোরে গেলে ক্রয় মূল্যের চেয়ে  মাত্র ১ টাকা লাভে রমজানের খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি। তার দোকানে কম দামে পণ্য পেয়ে খুশি ক্রেতারা। নামমাত্র লাভে পণ্য বিক্রির কথা শুনে আশপাশের এমনকি দূরের লোকজনও এসে তার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করছেন। এতে তার বিক্রিও বেড়েছে। প্রবাসীরাও তার থেকে মালামাল সংগ্রহ করছেন মুঠোফোনে অর্ডার দিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, বিগত ২০২৩ সালের রমজানেও শাহ আলম তার দোকানে ১ টাকা লাভে রমজানের খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করেছেন। এই ধারাবাহিকতা রাখতে এবারো তিনি তা অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে তিনি ১ টাকা লাভে প্রতি কেজি ছোলা ৯৮টাকা, খেসারি ডাল ১১৪ টাকা, চিড়া ৫৮ টাকা, চিনি ১৩৯ টাকা, বেসন ৮৬ টাকা, মুড়ি ৫৫ টাকা, খেজুর প্রতি কেজি ২৩৮টাকা, অপরটি প্রতি কেজি ৩৪৫টাকা বিক্রি করছেন। এছাড়া ভোজ্য তেল (সয়াবিন) প্রতি লিটার ১৪০ টাকা দামে বিক্রি করছেন (১০ মার্চের মূল্য তালিকা)।
শাহআলমের দোকানে পণ্য কিনতে আসা গনি মাস্টার বলেন, আমরা ফরিদগঞ্জ বাজারে গিয়ে যেই দামে পণ্য কিনি, তার চেয়ে অনেক কমেই বাড়ির পাশে শাহ আলম পণ্য বিক্রি করছেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।
মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মাহে রমজানকে সামনে রেখে গ্রামের মধ্যে শাহআলম যেই উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে আমরা খুশি। শহরের বড় বাজার থেকেও আমরা কম মূল্যে জিনিসপত্র পাচ্ছি।
গাজীপুর থেকে আসা ‘আমাদের স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশন’-এর সদস্য আজাদ ও আঃ মালেক জানান, আমরা প্রতিবছর সংগঠনের পক্ষে মাহে রমজানের সময় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করি। এবছরও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে মধ্য চরকুমিরা গ্রামে শাহআলম সাহেবের এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রির কথা শুনে এসেছি। আসার পূর্বে আমরা বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে পণ্য মূল্য যাচাই করেছি। ওইসব ব্যবসায়ী পাইকারী মূল্যে আমাদেরকে যেই দর দিয়েছে, শাহআলম সাহেব এর থেকেও কমমূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন। আমাদের আসা সার্থক হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশিদ পাঠান শাহ আলমের এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্যান্য বড় ব্যবসায়ীকেও মুনাফা কমিয়ে সমাজের প্রয়োজনে এই রমজানে এগিয়ে আসা উচিত।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, সমাজের মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করে ২০২৩ সাল থেকে রমজানের পূর্ব সময় থেকে ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করি। সাধ্যের মধ্যে থেকে মানুষের জন্যে কিছু করতে পারাটাও তৃপ্তিদায়ক। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায়ীর প্রতি অনুরোধ থাকবে, যাতে তারাও ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করেন। তাহলে অসহায়, মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এই রমজানে পণ্য কিনে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। এছাড়া আমি গত বছর ও এ বছর মাহে রমজানের ১৫দিন পূর্ব থেকে এক টাকা লাভে পণ্য মূল্য বিক্রি করে অধিকমূল্যে পণ্য বিক্রির চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। আমার মতে, সকল ব্যবসায়ীর উচিত কম লাভে এই সময়টায় পণ্য বিক্রি করা। কারণ কম পণ্য বিক্রি করে যেই লাভ হবে, বেশি পণ্য বিক্রি করে এর চেয়েও অধিক লাভ সম্ভব। উদহারণ আমি নিজেই। আমি ফরিদগঞ্জ বাজার থেকে পাইকারী মূল্যে পণ্য কিনে এক টাকা লাভে বিক্রি করছি।
এদিকে শাহ আলমের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র যুদ্ধাহত বীলমুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মাহে রমজানের সময়ে হ্রাসকৃত মূল্যে পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু আমদের দেশে তার উল্টো। আমার পৌর এলাকার শাহ আলম নামে এক ব্যবসায়ী গ্রামের ভিতরে থেকেও এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রির উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। আশা করছি তাকে অনুসরণ করে অন্য ব্যবাসয়ীরা এগিয়ে আসবেন।

 

সর্বাধিক পঠিত