মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অমর একুশে বই মেলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে যুক্ত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেছেন, আমাদের শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে হবে। মাতৃভাষার চেতনায় উজ্জীবীত হতে হবে। অন্য ভাষা ব্যবহার না করে নিজের ভাষার প্রতি সচেতন হয়ে শুদ্ধভাবে ব্যক্ত করতে হবে। আমরা যেমন ভাষার প্রতি ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ করি ভাষা সংগ্রামী ও ভাষা বীরদের শ্রদ্ধা জানাই। পাশাপাশি ভাষার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা প্রয়োজন। আর সেটা করতে হলে এই যে বইমেলা হলো। বইয়ের প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে ভাষার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে হবে।
বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসন,চাঁদপুর আয়োজিত মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অমর একুশে বই মেলা আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম, পৌর মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল,স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মাতৃভাষা সংস্কৃতির বাহন। মানুষের সমস্ত জীবনযাপন তার সব কিছুরই বহিঃপ্রকাশ ভাষার মাধ্যমে। ভাষার অনেক ব্যবহার রয়েছে। সমাজের যেসব বৈষম্য আছে ভাষার মাধ্যমে ফুটে উঠে। তাই ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই আমাদের ভাষার উপরেই প্রথম আঘাতটা এসেছিলো। আমরা কিন্তু অন্য ভাষার বিরুদ্ধে ছিলাম না। দাবি ছিল আমাদের মাতৃভাষা যেন রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। কারণ সেই সময় জনসংখ্যার হিসেবে আমরা ছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ছিল শতকরা ৫৬ ভাগ। আর যেই ভাষা তারা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতেছিল। সেই ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করত তৎকালীন পাকিস্তানের শতকরা দুইভাগ মানুষ। কাজেই আমাদের দাবি কতটা যৌক্তিক ছিল গণতান্ত্রিক ছিল, সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে। সেই সময় আমাদের নেতৃবৃন্দ কতটা দূরদর্শী দেশপ্রেমিক ছিলেন। এই ভাষার উপর তাদের আঘাতহানা মানে, তারা পুরো জাতিকে মাথানত করে রাখবে। কাজই প্রতিবাদ তখনই প্রয়োজন ছিল এবং তারা রক্ত দিয়ে মীমাংসা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি।
দীপু মনি বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসের তারিখ ও ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা হবে তার সিদ্ধান্তও নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের ভাষার আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন একেবারেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজই এই ইতিহাস প্রজম্মের জানা খুবই প্রয়োজন। ভাষার জন্য আমাদের যে সংগ্রাম অর্জন তা স্মরণ করার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে পিতা মুজিবের সোনার বাংলা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বার কাজে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবার আহবান জানান। তিনি সকল অশুভ দূর আর যা কিছু শুভ আনন্দময় নিত্য সঙ্গী হোক এই কামনা করেন।
সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবুর উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত, পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট রঞ্জিত রায় চৌধুরী, সনাক সভাপতি অধ্যাপক মোশারফ হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট অংশীজন,শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন ।
আলোচনা সভা শেষে বইমেলার সমাপনী,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে এই মহান দিবসটির সমাপনী হয়। এর আগে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহিদদের স্মরণে চাঁদপুর জেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। অত:পর শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে প্রভাত ফেরি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।