অটোবাইক চালক সাব্বির হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তার
কচুয়ায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ক্লু-লেস ‘অটোবাইক চালক সাব্বির হত্যা’ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন এবং মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, লুণ্ঠিত অটোবাইক ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে কচুয়া থানা পুলিশ। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রেস বিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ করে চাঁদপুর জেলা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো : চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী এলাকার মোঃ জহির বাবলা (৪৫), মতলব দক্ষিণ উপজেলার মোঃ আনিছুর রহমান (২৫), একই উপজেলার মোঃ রাজু বেপারী (২৫), মোঃ রাকিব (২৩) ও মোঃ আমির হোসেন হানজালা (২৫), নরসিংদী জেলার পলাশ থানার চরসিন্দুরের কবির হোসেন (৩৫) এবং দিনাজপুর জেলার কোতয়ালী থানার মতুল্লাপুর এলাকার হামিদুর রহমান (৪১)।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, কচুয়ার পালাখাল ইউনিয়নের ভুঁইয়ারা গ্রামের অটোবাইক চালক মোঃ সাব্বির হোসেন (১৮) গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে অটোবাইক নিয়ে বের হয়ে রাতে আর বাড়ি ফিরেননি। পরদিন ২৫ জানুয়ারি তার মা জাহানারা বেগম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ওইদিন বিকেলে পুলিশ স্থানীয় সংবাদের ভিত্তিতে ওই ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া নামক স্থান থেকে হাত-পা বাঁধা জখম অবস্থায় সাব্বিরের মরদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় চালকের মা জাহানারা বেগম ২৬ জানুয়ারি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গ্রহণের পর কচুয়া থানা পুলিশ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারে তদন্ত ও আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত পুরো অপরাধী চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ দেলোয়ার হোসেন রাজিবসহ সঙ্গীয় ফোর্স প্রথমে আসামী হানজালাকে গ্রেফতার করেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বাকি আসামীদের গ্রেফতার করেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, অটোবাইক চালক সাব্বির হত্যায় জড়িত ছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা অন্য কোনো অপরাধে জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মূলত চালককে খুন করে অটোবাইক ছিনতাইয়ের জন্যেই এই হত্যাকাণ্ড। তারা অটোবাইকটি নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সংঘটিত বিভিন্ন মালামাল আলামত হিসেবে জব্দ করে এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে তারা এই ঘটনার সাথে জড়িত। এটি একটি অটোবাইক ছিনতাইকারী সঙ্ঘবদ্ধ দল। তারা চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লায় অটোবাইক ছিনতাই করে সেইগুলো বিক্রি করে সংসার চালায়। আসামীদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ রিজওয়ান সাঈদ জিকু, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গ্রেফতারকৃত ৬ আসামীর কাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। আসামীরা হচ্ছে : আমির হামজা প্রকাশ হানজালা, রাকিব বেপারী, আনিস বেপারী, রাজু বেপারী, কবির হেসেন ও হামিদুর রহমান। কচুয়া থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।