নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে হার পাওয়ার প্রকল্প : পলক
তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম নিরাপদ ব্যবহার করে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীদের প্রকল্পের জেলা কোঅর্ডিনেটর কাজী আফজাল, তামান্না নূর ব্যবস্থা ও উদ্যোক্তা হিসাবে টেকসই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য চালু করা হয়েছে হার পাওয়ার প্রকল্প। যার মাধ্যমে একজন নারী ওমেন কল সেন্টার এজেন্ট, ওমেন ই-কমার্স প্রোফেশনাল, ওমেন আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে ১১০ দিনের একটি কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একদিকে নারীরা যেমন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ এতে বৃদ্ধি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন।
বুধবার ৩১ জানুয়ারি ফেনীতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এ হার পাওয়ার প্রকল্পের আওতায় ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার ৭৪৫ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ। তারমধ্যে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব না। সবাই বিদেশও যেতে পারবে না। এজন্য এমন কিছু ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে করে ঘরে বসে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করা যায়।
ল্যাপটপ পেয়ে ৩ জেলার নারীদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস কাজ করছে। তারা বলছেন, এ ল্যাপটপের মাধ্যমে কাজ করে তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়াও নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে হার পাওয়ার প্রকল্প ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন তারা।
ল্যাপটপ উপহার পাওয়া নারীরা বিভিন্ন লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটি অনেক বড় পাওয়া। বিনা খরচে আমরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। যে কোর্স আমি শিখছি তা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজে আত্মনির্ভরশীল হতে পারব। আমার কাছে ল্যাপটপ ছিল না, ল্যাপটপ দেয়ার ফলে কাজ করার ক্ষেত্র বাড়বে এবং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারব। নারীদের জন্য এমন সুযোগ প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি নিজের জ্ঞানকে প্রবৃদ্ধি করার ও নিজেকে স্মার্ট করে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার জন্য পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনিই ছিলেন বাঙালি নারীদের ক্ষমতার পথিকৃৎ। আমরা আরও ধন্যবাদ জানাতে চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ।যিনি প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন হার পাওয়ার প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নিজ উপজেলায় পেয়েছি সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম। আমরা দক্ষ ট্রেইনার পেয়েছি।যারা অনেক আন্তরিকতা ও দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের ক্লাসগুলো খুব চমৎকার ভাবে পরিচালনা করছেন এবং আমাদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।তাই আমি মনে করি আমাদের মেন্টরের সাপোর্ট ও নিজের প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের কোর্সটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে চলেছি। সর্বশেষ আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই , এ প্রকল্পের সাথে জড়িত সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে। আমরা মেয়েরা যেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারি। নারীর ক্ষমতায়ন তা হোক দেশ ও জাতির স্বার্থে।
এ প্রজেক্টের মাধ্যমে আমাকে হাতে কলমে সব শেখানো হচ্ছে। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার৷ এখন আমি সে সুযোগ পেয়েছি৷ আগে বন্ধুদের থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক গল্প শুনেছি তখন থেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। প্রশিক্ষণ নিয়েছি, ল্যাপটপ উপহার পেয়েছি এখন নিজেকে প্রমাণ করার পালা। আমি নিজে উপার্জন করার জন্য মুখিয়ে আছি। ল্যাপটপটি আমার স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে, কারন নিজের ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য ছিল না।
তারা আরো বলেন, পারিবারিক কারণে অনেক নারীরা বাইরে কাজ করতে অভ্যস্ত হতে পারে না। এর পাশাপাশি বর্তমানে চাকরির বাজার অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ৷ চাইলেও চাকরি পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু হার প্রজেক্টের মাধ্যমে কাজ শিখে আমরা নারীরা ঘরে বসে আয় রোজগার করার সুযোগ পাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ফেনীর জেলা প্রশাসক মোছাঃ শাহীন আক্তার, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও উই’র সভাপতি নাসিমা আক্তার নিসা, প্রকল্পের জেলা কো-অর্ডিনেটর কাজী আফজাল, তামান্না নূর ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।