ময়লার ভাগাড়ই এখন বকের আহার
বকের প্রধান খাদ্য মাছ। এছাড়া ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ পোকা খেয়ে বেঁচে থাকা এরা। বর্তমানে নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় বকের খাদ্য সংকট দেখা গেছে। কমে গেছে প্রজনন।
বাংলাদেশে সাধারণত কানিবক, সাদাবক, গো-বকসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বক দেখতে পাওয়া যায়। চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব ডাকাতিয়ার পাড়ে আগে শত শত সাদা বক দেখা যেতো। এখন বাসস্থান ও খাদ্য সংকটে বিলুপ্তির পথে এসব সাদা বক। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে পাখিগুলো।
খাদ্য সঙ্কটের কারণে জীবন বাঁচাতে ময়লার ভাগাড়ে বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে জলচর এ পাখির। চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড় অবস্থিত শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্বর্ণখোলা এলাকায়। সেখানে প্রতিদিন শত শত বক জীবন বাঁচাতে গ্রহণ করছে বিষাক্ত ময়লা-আবর্জনা। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ময়লা ফেলা হয় বিশাল এ জায়গাজুড়ে। আর এতে খাবারের খোঁজে আসে বকগুলো।
বাসচালক সুমন মিজি বলেন, বাসস্ট্যান্ডের পাশেই ময়লার স্তূপ। প্রতিদিন সকালে এখানে দলবেঁধে আসে বক। আগে পুকুর কিংবা খালে এসব বক দেখতাম কিন্তু এখন আর দেখি না। মূলত খাবারের খোঁজে তারা এ স্থানটি নিরাপদ মনে করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির বলেন, সারাজীবন জেনেছি বক মাছ, ব্যাঙ খায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখছি ময়লার এই ভাগাড়ে ঝাঁক বেঁধে বক খাবার খেতে আসে। আসলে আগের মতো খাল-বিল না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ময়লার ভাগাড়ে আসে খাবারের সন্ধানে।
পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, প্রকৃতি বাঁচলে, পরিবেশ বাঁচলে দেশ বাঁচবে। প্রকৃতির আমি উপকার না করি কিন্তু আমার দ্বারা যাতে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না হয়। সে বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার। তিনি বলেন, নগরায়নের কারণে এখন আর আগের মতো জলাশয় দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে বকসহ অন্যান্য পশু-পাখি খাদ্য সংকটে পড়ছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তারা ময়লার ভাগাড় থেকে আবর্জনা খেয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়।
‘ময়লার ভাগাড়ে অনেক বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত থাকে। এতে অনেক পশুপাখি মারা যাচ্ছে। তাদের বংশবিস্তার কমে যাচ্ছে। যেসব গরু এই ময়লা খেয়ে বড় হচ্ছে, মানুষ তার মাংস ও দুধ খেয়ে সেই ক্ষতিকর পদার্থগুলো মানবদেহেও যাচ্ছে’, যোগ করেন এ সহযোগী অধ্যাপক।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আসলে আমি এই খবরটি জানতাম না। মূলত যখন পশুপাখি খাবার সংকটে থাকে তখন তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে টিকে থাকতে চায়। এটি প্রকৃতির জন্য ভালো কোনো লক্ষণ নয়। সূত্র : যায়যায়দিন।