‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে আলেম সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার
দেশপ্রেম ও নৈতিকতা জাগ্রত হলে উগ্রবাদ প্রতিরোধ সম্ভব : জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান
বর্তমানে উগ্রবাদের বড় মাধ্যম হলো সোস্যাল মিডিয়া : পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে চাঁদপুর জেলার মসজিদ সমূহের ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের অংশগ্রহণে ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে আলেম সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি সোমবার সকাল ১০টায় পুলিশ লাইন্সে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশপ্রেম ও নৈতিকতা জাগ্রত হলে উগ্রবাদ প্রতিরোধ সম্ভব। যেমন-মুমিন মানে বিশ্বাসী। আর আখিরাতে বিশ্বাসীকে মুমিন বলা হয়। ইসলাম মানে আনুগত্য। মুসলিম অর্থ অনুগত ব্যক্তি। যিনি ঈমানের সাথে আল্লাহ ও রাসুল-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন তাকেই আমরা মুমিন বলি। আমাদের সন্তানদের মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আবার যে যেই ধর্মই পালন করি, আমার সন্তান হিসেবে তাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমার সন্তানটি সুস্থ, কিন্তু সে ভালো মানুষ হতে পারেনি। তাহলে আমি তাকে সুশিক্ষা দিতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, উগ্রবাদ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ফেতনা-ফাসাদ বর্তমানে এটি বড় সমস্যা। এগুলোর সংমিশ্রণে হয় উগ্রবাদ। এ সমস্যা প্রতিরোধে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই স্বার্থপর। যেমন যে যেই কর্মই করি, সেটা নিজের জন্য করি। আবার সবাই কিন্তু নিজের উন্নয়ন চাই। তাহলে আমার সন্তানকে, আমার সমাজকে, আমার দেশকে ভালো রাখতে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি আবশ্যক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডিএমপির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জসীম উদ্দিন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাশেদুল হক চৌধুরী, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাঈদ নাসিরুল্লাহ পিপিএম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) চাঁদপুর-এর উপ-পরিচালক মোঃ রুহুল আমিন, জেলা জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওঃ মোঃ সাইফুদ্দিন খন্দকার প্রমুখ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসিন আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন পুলিশ লাইন্স জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আব্দুস সালাম। আরো বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওঃ মোঃ আব্দুস সালাম, মসজিদে গোর এ গরিবা কমপ্লেক্সের খতিব মাওঃ মোঃ আবদুর রশিদ তালুকদার, জেলা পরিষদ সংলগ্ন মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওঃ মোঃ আবদুর রউফ, জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওঃ মোঃ আবদুর রহমান গাজী, ইফার মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মাওঃ খাজা মোঃ জোবায়ের প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা সবাই একমত যে, ইসলামে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। তবে উগ্রবাদের অবস্থানটা সকলের মাঝেই আছে। উগ্রবাদ একটা বড় সমস্যা। বর্তমানে উগ্রবাদের বড় মাধ্যম হলো সোস্যাল মিডিয়া। বিভিন্ন ধর্মের থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় তা দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব চিন্তা চেতনা আছে। সেই চেতনা সমাজ বা রাষ্ট্র যখন গ্রহণ করে না তখন সে বুঝাতে উগ্র হয়ে যায়। সেই মত কারো মাধ্যমে চাপিয়ে দেয়া বা মত প্রতিষ্ঠা করা এটাই এক ধরনের উগ্রবাদ। যে কোনো বিষয় উগ্রবাদ দিয়ে শুরু হয়ে পরে রূপ নেয় জঙ্গিবাদের। কাজেই বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে স্বজন ও সন্তানের পারিবারিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।