• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আপন ভাতিজাই খুন করলো ফুফুকে

প্রকাশ:  ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বিউটিশিয়ান ও প্রবাসীর স্ত্রী মমতাজ বেগম রিক্তার নৃশংস খুনের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই খুনের রহস্য উন্মোচন এবং মালামাল উদ্ধার করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। এমনকি খুনিও আটক হয়েছে। রিক্তার খুনি হচ্ছে তার আপন ভাতিজা। রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানায় প্রেস ব্রিফিং করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পংকজ কুমার দে। এ সময় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, খুন হওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি এবং আটকৃতদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক খুনের রহস্য বের করতে সক্ষম হয়। বাবার দেয়া জমিতে ঘর তুলে থাকাটাই কাল হলো রিক্তার জন্য। আপন বড় ভাইয়ের ছেলের হাতে প্রাণ দিতে হলো রিক্তাকে।
মমতাজ বেগম রিক্তার স্বামী হারুনুর রশিদ (রাকিবুল হাসান) দীর্ঘদিন দুবাই প্রবাসী। রিক্তা বিয়ের পর থেকে তার পিতার বাড়িতেই বসবাস করেন এবং তার পিতার কাছ থেকে জমি পেয়ে একটি টিনশেড বিল্ডিং তৈরি করে স্বামীসহ বসবাস করেন। তিনি গৃদকালিন্দিয়া বাজারে বধুয়া বিউটিপার্লার নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। মূলত মমতাজ বেগম রিক্তা তার পিতার বাড়িতে জমি পাওয়া এবং ওই জমিতে টিনশেড ঘর নির্মাণ করে বসবাস করা নিয়েই তার আপন বড় ভাই আব্দুল মালেক বেপারীসহ তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম এবং এই দম্পতির ছেলে মেহেদী হাসান শুভদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ইতিমধ্যে আব্দুল মালেক বেপারী তাদের বাড়ির তার অংশে একটি বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ করছেন। এ কাজ দেখাশোনা করার জন্যে প্রায় সময়ই তার ছেলে মেহেদী হাসান শুভ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। মেহেদী হাসান শুভ ঢাকায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে। তিনি গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা থেকে তাদের কাজ দেখাশোনা করার জন্যে বাড়িতে আসেন। তিনি নলগোড়া এলাকায় তার নানার বাড়িতে থেকে চরমান্দারী এসে প্রতিদিন তাদের বাড়ির কাজ দেখাশোনা করেন। ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে মমতাজ বেগম রিক্তা গৃদকালিন্দিয়া বাজারে তার নিজের বিউটিপার্লার থেকে বাড়িতে আসার পর ভাতিজা মেহেদী হাসান শুভকে বাড়িতে দেখে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে যান রিক্তা। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে রিক্তা তার বড় ভাই আব্দুল মালেক বেপারী ও ভাবী কোহিনুর বেগমের বিষয়ে দোষারোপ করে বিভিন্ন কথা ভাতিজা মেহেদী হাসান শুভকে বলার পর শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে ফুফু মমতাজ বেগম রিক্তার ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
বের হয়েই শুভ তাদের নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে একটি হাতুড়ি ও একটি কাটার নিয়ে এসে পেছন থেকে সজোরে রিক্তার মাথার পেছনে আঘাত করলে রিক্তা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরক্ষণেই শুভর গায়ে জড়িয়ে থাকা চাদর দিয়ে রিক্তার গলায় পেঁচিয়ে তার বসতঘরের বাথরুমের ভেতরে নিয়ে যায়। তখন মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যে শুভ কাটার দিয়ে রিক্তার হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয়। পরে ঘরের ভেতরে খাটের উপর থাকা কম্বল দিয়ে রিক্তার নিথর দেহ বাথরুমেই ঢেকে রেখে চলে যায়। সে সময় বিদ্যুৎ না থাকায় শুভ অন্ধকারের মধ্যে অনায়াসে সেখান থেকে পালিয়ে নলগোড়া তার নানার বাড়িতে চলে যায়।
পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ঘটনার পর পরই মেহেদী হাসান শুভসহ দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একপর্যায়ে শুভ হত্যাকণ্ডের কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্য মোতাবেক চরমান্দারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও কাটার উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে মমতাজ বেগম রিক্তার দুবাই প্রবাসী স্বামী হারুনুর রশিদ (রাকিবুল হাসান) বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা (যার নং-১৯, তারিখ-১৯/০১/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪) দায়ের করেন। থানা পুলিশ অভিযুক্ত মেহেদী হাসান শুভকে শুক্রবার বিকেলেই চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করে।

সর্বাধিক পঠিত