• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আলোচিত রাখি রাণী হত্যা মামলায় কারাগারে মৃত্যু হয়েছে স্বামীর

প্রকাশ:  ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুর জেলা কারাগারে কচুয়ার আলোচিত রাখি রাণী হত্যা মামলায় হাজতি স্বামী ব্রজলাল পাটিকরের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ব্রজলাল পাটিকর কচুয়া পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড কড়ইয়া পাটিকর পাড়ার রাখাল চন্দ্র পাটিকরের ছেলে। ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর কচুয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্রজলালের দ্বিতীয় স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্রজলাল পাটিকরকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
পরে ওই মামলাকে সাজানো দাবি করে ব্রজলালের ছেলে দিলীপ চন্দ্র বাদী হয়ে ২০১০ সালে আরেকটি মামলা করেন। দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এহসানুল হক ওরফে মিলনসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট থাকার কারণে ব্রজলালের স্ত্রী ওই সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ও পরিবার।
চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেলার মোঃ মনির হোসাইন জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর কচুয়া থানায় স্ত্রী হত্যা মামলায় ব্রজলাল পাটিকরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। তিনি রোববার সকালে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে কারাগারের স্বাস্থ্য সহকারী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ ওমর ফারুক বলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাজতি ব্রজলাল পাটিকরের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখেছেন, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।
ব্রজলালের আইনজীবী অ্যাডঃ মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্রজলালের স্ত্রী ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে কচুয়া থানার সুবিদপুর কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রের মহিলা বুথের দায়িত্ব পালন করেন। ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এহসানুল হকসহ তার সমর্থকদের নিয়ে জাল ভোট দিতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রজলালের স্ত্রীকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। ওই ঘটনার জের ধরে নির্বাচনে জয়ের পর তার বাড়িতে এহসানুল হকের নেতৃত্বে সমর্থকেরা হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। ব্রজলালের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে পরদিন কচুয়া বাসস্ট্যান্ডে লাশ ফেলে রাখে।
অ্যাডঃ হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় এহসানুল হকের চাপে পুলিশ তাৎক্ষণিক মামলা না করে দুই বছর পর নামমাত্র মামলা করে। যেখানে দুঃখজনকভাবে ভুক্তভোগীর স্বামীকেই আসামি করা হয়। পরে ২০১০ সালে ব্রজলাল পাটিকরের ছেলে বাদী হয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। যাতে এহসানুল হকসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮১০ জনকে আসামি করা হয়।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রজলাল পাটিকরের বিরুদ্ধে একতরফা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইনের বিধান অনুযায়ী তাকে পরবর্তী মামলা থেকে বাদ দিতে পারেননি। ফলে গত ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ব্রজলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রোববার সকালে ব্রজলালের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে তার লাশ নিতে আসেন তার প্রথম স্ত্রী ঝর্ণা রাণী দে। লাশের সামনে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে চিৎকার করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী রাখি রাণীকে হত্যা করে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার কারণে আজ আমার স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে। আমার স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামী রেহাই পেলোনা না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ করে কী লাভ হলো। মিথ্যা মামলার কলঙ্ক নিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
ব্রজলালের ভাগনে কৃষ্ণ পাটিকর বলেন, জোট সরকার আমলে তার মামিকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দিয়ে মামাকে আসামি করা হয়েছিল। যার দরুণ অসুস্থ হয়ে তিনি আজ মারা যান। এ ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
চাঁদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটে আরএম জাহিদ হাসান বলেন, ব্রজলালের লাশের সুরতহালের সময় তেমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।