জামানত হারাচ্ছেন চাঁদপুরের ২০ প্রার্থী
জাতীয় নির্বাচনে চাঁদপুরে ২০ জন সংসদ সদস্য প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই নিয়ম অনুসারে জামানত হারাচ্ছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৩০ প্রার্থী। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, একটি আসনের মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যার ৮ ভাগের এক ভাগের কম ভোট পাওয়া প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন।
জামানত হারানো সবচেয়ে আলোচিত দুই ব্যক্তি হচ্ছেন চাঁদপুর-৫ আসন থেকে চেয়ার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মুজাদ্দেদী এবং চাঁদপুর-৪ আসন থেকে নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর মহাসচিব ড. মোঃ শাহজাহান।
তথ্য মতে, চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোঃ সেলিম প্রধান চেয়ার প্রতীক ৫৭৭৯ ভোট এবং জাসদের সাইফুল ইসলাম মশাল প্রতীক ৩৮২১ ভোট পেয়ে জামানাত হারালেন। এই আসনে প্রদত্ত ভোট হাচ্ছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৮টি। এই আসনে বিজয়ী ড. সেলিম মাহমুদ নৌকা নিয়ে পেয়েছেন ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৩০৭ ভোট।
চাঁদপুর-২ মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসফাক আহসান পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৩৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার সভাপতি এমরান হোসেন মিয়া লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন ১২৬৫ ভোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পর্টির মোঃ মনির হোসেন একতারা প্রতীক পেয়েছেন ৯৫৮ ভোট এবং জাসদের মোঃ হাছান আলী সিকদার মশাল প্রতীক পেয়েছেন ৫৮৭ ভোট। এরা প্রত্যেকেই এবার নির্বাচনে এসে জামানত হাবালেন। কেননা এই আসনে মোট প্রদত্ত মোট ভোট হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৬টি। এই আসনে বিজয়ী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৯৯৯ ভোট।
চাঁদপুর-৩ সদর ও হাইমচর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেদওয়ান খান ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন ১ হাজার ২২৮ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ মহসীন খান লাঙল প্রতীক পেয়েছেন ৮২৮ ভোট, জাকের পার্টির মোঃ কাওছার মোল্লা গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজান ৪৩৭ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী আবু জাফন মোঃ মাঈনুদ্দিন মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩৩ ভোট এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট। এরাও নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। কারণ এই আসনে মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যা হাচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৪২টি। আসনটিতে বিজয়ী ডা. দীপু মনি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৮ হাজার ১৬৬ ভোট পেয়েছেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া ঈগল প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ১৯৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম প্রার্থী ড. মোঃ শাহজাহান নোঙ্গর প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৯০ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন ২০১ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী আবদুল গনি আম প্রতীকে পেয়েছেন ২০৮ ভোট, তৃণমুল বিএনপি প্রার্থী মোঃ আবদুল কাদির তালুকদার সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬০ ভোট। এরাও সবাই নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। এবারে আসনটিতে মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যা হচ্ছে ৯৫ হাজার ৮৪০টি। আসনটিতে বিজয়ী সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৩৬ হাজার ৪৫৮ ভোট পেয়েছেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ আসনেরই সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া ঈগল প্রতীক নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩৫ হাজার ৪২৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। তাদের দুজনের ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ১ হাজার ৩৩ ভোট।
চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ প্রার্থী সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মুজাদ্দেদী চেয়ার প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪৪ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ প্রার্থী মোঃ মনির হোসেন মজুমদার মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৮০ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫৬ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী আক্তার হোসেন ছড়ি প্রতীকে ১৩৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে মোট প্রদত্ত ভোট সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯১টি। আসনটিতে বিজয়ী রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম নৌকা প্রতীকে ৮৩ হাজার ৯২৭ ভোট পেয়েছেন এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মাইনুদ্দিন ৩৮ হাজার ৬৩৬ ভোট ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সফিকুল আলম ২২ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, চাঁদপুরের ৫টি আসনেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পাওয়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সূত্র : যায়যায়দিন।