ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী অবস্থান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপি না আসায় আওয়ামী লীগ তিনভাগে বিভক্ত। ২০১৮ সালে এই আসনটিতে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম নৌকার টিকিট পান ২০০১ সালে। তিনি ২০০১ সাল অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেলেও বিএনপি প্রার্থী আলমগীর হায়দারের কাছে পরাজিত হন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে পরের নির্বাচনেও। সেবার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লায়ন হারুন অর রশিদের কাছে তিনি পরাজিত হন। পরের বার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এমএ হান্নানের বিপরীতে জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নৌকার টিকিট পান সাংবাদিক শফিকুর রহমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে পুরো উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকলেও তবে এবারই নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে লড়তে হচ্ছে তাঁকে।
বর্তমান সংসদ সদস্যকে হারাতে আওয়ামী লীগের ২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. শামছুল হক ভূঁইয়া (ঈগল) এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক সিআইপি জালাল আহমেদ (ট্রাক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই তিন প্রার্থীর জন্যে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনের মাঠ সরগরম রাখছেন। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, জেলা পরিষদের সদস্য আলী আক্কাস ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত জিএস তছলিম, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুন নাহার প্রমুখ।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) প্রতীক নিয়ে কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক আবু সাহেদ সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ হারুন অর রশিদ সাগর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান রানাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন তার স্ত্রী মাইমুনা জালাল ইকরা, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজুদা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান তালুকদার, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন শাবু, সাবেক ছাত্র নেতা পাবেল পাটোয়ারী প্রমুখ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার জানান, আমি নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করছি, আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. শামছুল হক ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারী, তিনি দুর্দিনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, ফরিদগঞ্জে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছেন। আর বর্তমান এমপি সাংবাদিক শফিকুর রহমান একজন দলের এমপি হয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বাদ দিয়ে নিজেস্ব প্রতিনিধি লীগ দিয়ে ফরিদগঞ্জে রাজত্ব করেছেন এবং তিনি আমার সাথেও যোগাযোগ করেন নি।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শেখ সাজ্জাদ রশিদ সুমন। নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী বিএনএমের মহাসচিব ডাঃ শাহজাহান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করছেন আব্দুল কাদের তালুকদার, ফুলের মালা প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন বাকি বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ও আম প্রতীকে নির্বাচন করছেন আব্দুল গনি।