পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য যারা জীবনবাজি রেখে দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেছেন, সেসব পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ। গতকাল শনিবার জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম পিপিএম (সেবা)।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ যখন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তখন আপনারা (পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা) যে দেশপ্রেম নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন, স্বাধীন করেছেন, সে জন্যে আপনাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম এবং অশেষ কৃতজ্ঞতা। বছরে একটিবার আপনাদেরকে আমরা একত্রিত করে আপনাদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস শুনি এ জন্য যে, আপনাদের বীরত্বের ইতিহাস শুনে আজকের পুলিশ যেনো উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করে, দেশ যদি আবারো কখনো সংকটে পড়ে, ক্রান্তিতে পড়ে, তখন যেনো এই পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় দেশ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের যে ঋণ আছে, সে ঋণ পরিশোধ করতে চাই। আপনারা যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের পাশে থেকে কিছুটা হলেও ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ নিয়োগে আমরা মুক্তিযোদ্ধার কোনো কোটা ফাঁকা রাখতে চাই না। আপনাদের সন্তান বা প্রজন্ম থাকে তাদের সর্বাত্মাক সহযোগিতা করা হবে। আমার অফিস ও বাসা সবসময় আপনাদের জন্য খোলা থাকবে। শুধু পরিচয় দিবেন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইয়াছির আরাফাতের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্যাহ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রিভার) শ্রীমা চাকমা। এছাড়া বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক সচিব ও সাবেক পুলিশ সুপার মোঃ মমিন উল্যাহ পাটওয়ারী বীর প্রতীক-এর ভাই, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুল হকের ছোট ভাই আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমির হোসেন, কনস্টেবল জহিরুল হক ভূঁইয়া, কনস্টেবল মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও কনস্টেবল মোঃ হাবিবুর রহমান।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় আমরা যুদ্ধ করিনি। দেশের জন্যে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের নিয়ে আমাদের দেশ ও সন্তানরা গর্ববোধ করে, এটাই আমাদের পাওয়া। আমাদের মধ্যে দেশ ও সংস্কৃতির চেতনা ছিলো। আমরা কী পেলাম সেটা বড় কথা নয়, কিন্তু এ জাতি কী পেলো তা জানতে চাই জাতির কাছে।
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে ১,২৬২ জন গর্বিত পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছে। মহামারী করোনাকালীন ১০৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেন। নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ৬০ জন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ৮০ পরিবারের সদস্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা প্রদান করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পুলিশ লাইন জামে মসজিদের পেশ ইমাম আব্দুল সালাম।