নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে : শিক্ষামন্ত্রী
বাঙালির তাৎপর্য মণ্ডিত গৌরবগাঁথা ডিসেম্বরের বিজয় অধ্যায়কে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি স্মরণীয় করে রাখতে চাঁদপুরে ৩২তম মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়েছে। গতকাল ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে মেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে এদিন থেকেই প্রতিবছর এই মেলা উদ্বোধন হয়ে আসছে। ‘এসো মিলি মুক্তির মোহনায়’ এ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০২৩-এ প্রধান অতিথি হিসেবে শুভ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।
এ সময় তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিরস্ত্র বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সশস্ত্র বাঙালিতে পরিণত হয়েছিলো এবং সেই দিন বীর বাঙালিরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলো। বিজয়ের এই মাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের মানুষের জন্যে এই বিজয় মেলা গৌরব ও গর্বের বিষয়। কারণ সব জেলায় এরকম মেলা করা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল চেতনাকে বুকে ধারণা করে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে এদেশে সকল মানুষ সমান মর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারে। এদেশে কেউ কারো উপর তার মত চাপিয়ে দিবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই বাঙালি জাতি ছিলো সহজ-সরল নিরীহ। সেই বাঙালিরা জাতির পিতার ডাকে একাত্তরের ৯ মাসে সশস্ত্র বাঙালিতে পরিণত হয়েছিলো। এরপর তাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। যার ফলে আজকে আমরা বিশ্বের বুকে সম্মানের চোখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে এক লক্ষ্য নিয়ে এই দেশকে এগিয়ে নেবো। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় মেলা চাঁদপুর ২০২৩ স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানের সভাপতিত্বে ও উদ্যাপন পরিষদের মহাসচিব হারুন আল রশীদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওসমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কামান্ড কাউন্সিল চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডঃ জাফর ইকবাল মুন্না।
উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মাস্টার, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রঞ্জিত রায় চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, গীতা পাঠ করেন মনোজ আচার্যী, ত্রিপিটক পাঠ করেন ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী এই মেলার শুভ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ইয়াকুব আলী মাস্টার।
১৯৯১ সালে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা এ বছর গৌরবের ৩২ বছরে পা রাখলো। ৩২ বছর ধরে প্রতি বছর একই সময় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।