চাঁদপুর-২ আসনে পিতা-পুত্রের মনোনয়ন যুদ্ধ!
একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পিতা-পুত্র দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আসনটি হলো চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ)। এটি কি একই আসনে পিতা-পুত্রের মনোনয়ন যুদ্ধ? নাকি ভিন্ন কোনো কৌশল-এটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচিত বিষয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলীয় ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম এবং তাঁর বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু)।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে এ বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, মায়া চৌধুরী যদি মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে না পারেন তখন হয়তো তাঁর ছেলে দিপু চৌধুরীর দলের মনোনয়ন লাভে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এ উদ্দেশ্যেই বাপ-ছেলের একই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের মায়া চৌধুরীর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হলেন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া)।
তারা জানান, চাঁদপুর-২ আসনে মায়া চৌধুরী একাধিকবারের এমপি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে মতলব সেতু নির্মাণ, মতলব উত্তর উপজেলা, মতলব পৌরসভা, ছেংগারচর পৌরসভা প্রতিষ্ঠাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে মেঘনা-ধনাগোদা বাঁধ রক্ষায় ব্যাপক কাজ হয়েছে তাঁর সময়ে। দুই উপজেলার সব গ্রামেই এখন পাকা রাস্তা। ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে অসংখ্য। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের কারণে বৃহত্তর মতলববাসী বার বার মায়া চৌধুরীকে এমপি হিসেবে দেখতে চান।
জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকলেও এলাকায় মায়া চৌধুরী ও তাঁর বড় ছেলের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। গত ৫ বছর এমপি না থেকেও নিয়মিত এলাকায় এসেছেন এবং দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশে থেকেছেন মায়া চৌধুরী ও দিপু চৌধুরী।
গত এক বছর ধরে দুই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় উন্নয়ন সমাবেশ এবং শান্তি সমাবেশ করেছেন মায়া চৌধুরী ও দিপু চৌধুরী। এসব সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। মতলব দক্ষিণ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত আলী বাদল বলেন, মায়া চৌধুরীর হাত ধরে বৃহত্তর মতলবে যত উন্নয়ন হয়েছে এর আগে একশ’ বছরেও এতো উন্নয়ন এখানে হয়নি। মায়া চৌধুরী যেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে গেছেন গত ৫ বছরেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তাই অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে মতলবের মানুষ মায়া চৌধুরী অথবা তার ছেলে দিপু চৌধুরীকে এই আসনে এমপি হিসেবে দেখতে চায়।
ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল আলম জজ বলেন, দুবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি চাঁদপুর-২ আসনে উন্নয়ন, জনসেবা ও নেতৃত্ব গুণে মায়া চৌধুরী অনন্য। মতলব উত্তর ও দক্ষিণে যতো বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে তার সবই করেছেন মায়া চৌধুরী। বৃহত্তর মতলবের মানুষের কাছে তাই সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মায়া চৌধুরী। উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনতে আবারো মায়া চৌধুরী অথবা দিপু চৌধুরীকে এমপি হিসেবে দেখতে চায় বৃহত্তর মতলবের আপামর জনসাধারণ।
মতলব পৌরসভার মেয়র ও মতলব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, বৃহত্তর মতলবের উন্নয়নে মায়া ভাইয়ের অবদান মতলববাসী আজীবন স্মরণ করবে। তিনি এই জনপদের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে যুগ যুগ ধরে কাজ করে আসছেন। মতলবের মানুষ আবারো তাঁকে এই জনপদের দায়িত্বে দেখতে চায়।
মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, মতলব আর মায়া চৌধুরী একে অপরের পরিপূরক। আমরা ধন্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বৃহত্তর মতলবের অভিভাবক।
মায়া পুত্র ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু) বলেন, মূলত আমার বাবাই মনোনয়ন চেয়েছেন। আমি বাবার সাথে সারাজীবন একসাথে কাজ করেছি এবং এলাকার উন্নয়নগুলোতে বাবার সাথে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সাথে আমার ৩০ বছর ধরে সম্পর্ক। প্রত্যেকের সাথেই আমার নাড়ির একটি টান আছে। এ জন্য আমিও দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছি। আমাদের নেত্রী যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন। আমাদের পরিবার থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেবেন মতলববাসী তাকেই নির্বাচিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই আসনে আরো যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন তারা হলেন : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ নূরুল আমিন রুহুল, মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (এসি মিজান), জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ মঞ্জু, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম. ইসফাক আহসান সিআইপি, যুবলীগের মহিলা সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালী, বাংলাদেশ কৃষক লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম (খোকা) পাটোয়ারী, রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ লোকমান হোসেন।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫২৩ ভোট এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ ভোট। এছাড়া হিজড়া ভোটার ২জন। তারাই এমপি নির্বাচিত করবেন আগামী ৭ জানুয়ারি।