• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

প্রকাশ:  ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে লাগাতার বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে চাঁদপুর শহর। অন্যান্য উপজেলায়ও বিদ্যুতের সমস্যা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় শহরের রাস্তা-ঘাট গুলোও অনেকটা ফাঁকা ছিলো। সন্ধ্যার পর শহর যেনো ভুতুড়ে পরিবেশে পরিণত হয়। সকল দোকানপাট ছিলো বন্ধ। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার রাস্তায় ছিল না লোকজন। প্রবল দমকা হাওয়ায় উত্তাল মেঘনা নদীর বড় বড় ঢেউ শহর রক্ষা বাঁধসহ নদীর পাড়ে আছড়ে পড়েছে।
পুরাণবাজার হরিসভা মন্দিরের সামনে মেঘনার ভাঙ্গন স্থান থেকে কিছু বালু বস্তা নদীতে দেবে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। সেজন্য সকাল থেকেই জেলা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। চাঁদপুর-পুরাণবাজার ব্রিজের পুরাণবাজার অংশে ব্রিজের গোড়ায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে।
চাঁদপুর  বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানরা জানান, শহরের বেশ কিছু স্থানে বিদ্যুতের লাইনে গাছ উপড়ে ও গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তারও ছিঁড়ে গেছে। ডালপালা অপসারণ করে সংযোগ যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে কাজ চলছে।
পৌর ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে তার ওয়ার্ডের আক্কাছ আলী স্কুলের সামনে গাছ পড়ে বড় স্টেশন থেকে কালিবাড়ি উভয় দিকে যান চলাচল ব্যাহত এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত গাছটি কাটার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদপুর শহরের গণমাধ্যম কর্মী ও সংগীত শিল্পী কবির মিজি জানান, তার এলাকার পৌর ১২নং ওয়ার্ডে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে ও মিধিলির প্রভাবে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় শহরের অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন পাড়া-মহল্লাবাসী। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি  কেউ। শহরের রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকায় বিপাকে পড়েন শ্রমজীবী মানুষ। ঝড় বৃষ্টি কমার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। অতি বৃষ্টিতে নদীতে সামান্য পানি বাড়লেও তা বিপৎ সীমার অনেক নীচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। মিধিলি’র প্রভাবে দমকা হাওয়া, বৃষ্টি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেতেরও ক্ষতি হয়েছে বেশ।
সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের কৃষক আবুল ফজল বলেন, বৃষ্টিতে মাঠের আমন ধান ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া শীতকালীন কপি, টমেটো, শাক-পালংসহ শাক-সবজিরও কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে। এমন অবস্থা আরও দু’একদিন চললে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানান এ কৃষক।
সর্বশেষ আবহাওয়ার খবরে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকার গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কাছাকাছি দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে কলাপাড়ায় সারাদিন টানা বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বয়ে যায়। উত্তাল সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ আতঙ্ক সৃষ্টি করে জনমনে। এর প্রভাব চাঁদপুরেও পড়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি এখানেও হয়েছে।

 

সর্বাধিক পঠিত