ডাকাতিয়ার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে মৈশাদী
চাঁদপুর সদরের সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে খ্যাত মৈশাদী ইউনিয়নের মৈশাদীতে শুরু হয়েছে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন। ওই গ্রামের ইউসুফ খান বাড়ির পূর্ব পাশে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত তিনদিনে ডাকাতিয়ার করাল গ্রাসে তলিয়ে গেছে প্রায় একশ’ মিটার এলাকা। যার কারণে স্থানীয় জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাটি। তারা জানান, ডাকাতিয়া নদী প্রতিবছর অল্প অল্প করে ভাঙে। গত এক দশকে শুধু মৈশাদীতেই ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। এত ক্ষতির পরও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়। অচিরেই নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় বসবাস করতে হবে ওই এলাকার নদীর পাশে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারকে।
ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন সম্পর্কে নদীর পাশে বসবাসকারী আবুল বাশার বলেন, প্রতিবছর নদী আমাদের জমি একটু একটু করে ভেঙ্গে নিয়ে যায়। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সকলকে অবহিত করেছি। সবাই আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু কাজ হয় না। অল্প অল্প করে ভাঙে তাই কেউ আমাদের দিকে নজর দেয় না। গত ১০ বছরে আমাদের এলাকার এক কিলোমিটারের মত জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। ছিন্নমূল হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। এখন আমাদের ভিটেবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা নদীতে তলিয়ে গেলে থাকবো কোথায় জানি না। আমার কাছে এত টাকাও নেই যে, আবার অন্য কোথাও জমি কিনে ঘর তুলবো। বাড়িটা ভেঙ্গে গেলে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হবে।
ভাঙন এলাকায় বসবাসকারী আসমা বেগম জানান, এখন নদীটি যেখানে ভাঙছে সেখানে আমাদের বসত ঘর, রান্নাঘর ছিল। প্রতিবছর এখানে নদীতে ভাঙে। তাই গত বছর ঘরগুলো সরিয়ে নিয়েছি। এরপর আর জায়গা নেই। নদীতে ভাঙলে কি করবো জানি না।
নদী থেকে প্রায় একশ মিটার দূরত্বে রয়েছে রেলস্টেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ অসংখ্য মানুষের ঘর-বাড়ি। নদী ভাঙন রোধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে এসব প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনা। তাই তারা নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। সাথে নদী ভাঙন রোধে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয় মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনের বিষয়টি বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার ও সচিত্র প্রতিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু মৈশাদীবাসীর দুঃখ লাগব হয়নি একটুও।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত জানান, ভাঙনের বিষয়টি জেনে আমি আমার দপ্তরে লোক পাঠিয়েছি। আজ কালের মধ্যে আমি ভাঙন-স্থলে যাবো।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, ডাকাতিয়া নদীর বেশ কয়েকটি এলাকা ভাঙন রোধে একটি ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটি পাস হলেই ভাঙন রক্ষায় কাজ করা হবে।