• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জে স্বামীর বাড়ি থেকে মা-মেয়ে উদাও!

প্রকাশ:  ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

স্বামীর বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে স্ত্রী মরিয়াম (২৩) আর ৬ বছর বয়সী কন্যা সন্তান নিখোঁজ। পুলিশের দ্বারস্থসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজে দিশেহারা স্বামী নামক ব্যক্তিটির। স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা সন্তানের কোনো হদিস পাচ্ছে না প্রায় ৪০ দিন ধরে স্বামী হাবিব। মরিয়ম আর তার সন্তানের কোনো খোঁজই পাচ্ছে না বাবার পরিবারসহ স্বামীর পরিবার। সকলের একই প্রশ্ন-কই গেলো মা মেয়ে? গত ৬ অক্টোবর শুক্রবার সকালে বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বাংলা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীর বাড়ি বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাজি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মরিয়ম বেগম।
তিনি সন্না গ্রামের হাজী বাড়ির হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ও অলিপুর গ্রামের বাংলা বাড়ির বাবুলের মেয়ে। স্ত্রী-সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ (এসডিআর নং-২৬১৫) দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হাবিবুর রহমান ও মরিয়ম বেগম। বিয়ের পর থেকে মরিয়ম তার খেয়াল-খুশি ও ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতেন এবং সবসময় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই বিষয়ে বাবা ও স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে বারংবার নিষেধ করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
গত বছর সন্তানের ঔষধ কেনার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে বাকিলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন এবং তিনদিন পর বাড়িতে ফিরে আসেন মরিয়ম বেগম। এ ঘটনায় পারিবারিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভবিষ্যতে এমনটি আর করবেন না বলে জানান তিনি।
অসুস্থ সন্তানের কথা বিবেচনা করে মরিয়মকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকে নিয়ে আবারো সংসার শুরু করেন স্বামী হাবিবুর রহমান। সবশেষ গত ৬ অক্টোবর স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিশু সন্তানকে নিয়ে বের হন মরিয়ম বেগম। যাওয়ার সময় তিনি দেড় ভরি স্বর্ণ, নগদ ২ লাখ টাকা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যান।
হাবিবের শ^শুর বাড়ির লোকজন জানায়, মরিয়ম তাদের বাড়িতে যায়নি। এরপর থেকে তাকে খুঁজতে শুরু করেন স্বামী হাবিবুর রহমানসহ তার শ^শুর বাড়ির লোকজনও।
স্থানীয়দের ধারণা, মরিয়ম বেগম পরকীয়ায় আসক্ত। এর আগে তিনি নিখোঁজ হয়ে যার কাছে গিয়েছিলেন, এখনো হয়তো তার কাছেই গিয়েছেন। বিষয়টি তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন জানলেও পরকীয়া প্রেমিকের পরিচয় ও ঠিকানা না জানার কারণে তারা মরিয়মের খোঁজ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মরিয়মের মায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেয়ের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মরিয়ম নাতনিকে নিয়ে কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। মোবাইল ফোনও বন্ধ। জামাই (হাবিব) তাদেরকে খুঁজছেন, আমরাও খুঁজছি। এর আগে একবার নিখোঁজের পর আবার ফিরে আসার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তিনদিন নয়, একদিন পর সে (মরিয়ম) ফিরে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জামাই ভালো মানুষ। তিনি মেয়ে-নাতনিকে পাওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাই আমরা দেইনি। মেয়েকে নিয়ে জামাই ঢাকা বাসা ভাড়া থাকতো।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। বাড়িতে তার (মরিয়ম) বেপরোয়া চলাফেরার কারণে ঢাকায় বাসা নিয়েছি। সে রাত-বিরাতে মোবাইলে কথা বলতে না পেরে বাসা ছেড়ে বাড়িতে চলে যায় এবং গত কোরবানি ঈদের পর আমাদের বাড়িতে না থেকে বেশিরভাগ সময় তার বাবার বাড়িতে থাকছে।
তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে আমাদের বাড়িতে এসে এক রাত থেকে আবারো বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সে বাবার বাড়িতে না গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে নিখোঁজ হয় এবং যাওয়ার সময় আমার দেড় ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের হার্টে ফুটা (ছিদ্র)। তার চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হয়। অথচ গত একমাসের বেশি সময় ধরে তাকে ডাক্তার দেখাতে পারছি না। কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুজন কুমার দাশ জানান, পরিবারের সদস্যরা বলছেন মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ। তাই তাদেরকে নিখোঁজ ডায়েরি করার পরামর্শ দিয়েছি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

 

 

সর্বাধিক পঠিত