চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতায় আধুনিক হলো সরকারি জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট
প্রশস্ত রুম। পুরো রুম একাধিক এসির দ্বারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। টাইলস করা হাই কমেড সম্বলিত বাথরুম। ঝকঝকে উন্নতমানের টাইলস, রুচিশীল জানালার পর্দা, সোফাসেট। এ যেনো ভালোমানের কোনো বাসাবাড়ির ড্রয়িং রুম। কিন্তু না, এটা কোনো বাসার ড্রয়িং রুম নয়। এই দৃশ্য আড়াই শ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের কেবিনের। হাসপাতালের সবকটি কেবিনই বর্তমানে এমন সুসজ্জিত এবং উন্নত। এছাড়া অন্যান্য ইউনিটও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। হাসপাতালের কেবিন ব্লক, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি বিভাগ ও ইপিআই বিভাগে সংস্কারসহ নানা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এসব ইউনিট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং উন্নতমানের টাইলসসহ রুচিশীল আসবাবপত্র রয়েছে। আর এমন আধুনিকতার ছোঁয়াসহ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে চাঁদপুর পৌরসভার আর্থিক সহায়তায়। শুধু তাই নয়, বিশুদ্ধ সুপেয় পানির জন্যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করে দেয়া হচ্ছে পৌরসভা থেকে। এর জন্যে ব্যয় হবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এই পুরো ব্যয়টাই পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে করা হচ্ছে। এসব তথ্য জানালেন পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল।
গত কদিন আগে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল হাসপাতালে যান কজন রোগীর চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে। তখন মেয়রের সাথে এই প্রতিবেদকও ছিলেন। রোগী দেখার পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান মেয়রকে পৌরসভার অর্থায়নে আধুনিকমানে গড়ে ওঠা হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শনে নিয়ে যান। সাথে এই প্রতিবেদকও ছিলেন। হাসপাতালের কেবিন ব্লকে গিয়ে দেখা গেলো পুরো রুম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ঝকঝকে উন্নতমানের টাইলস, হাই কমেড সম্বলিত প্রশস্ত বাথরুম, সোফাসেট এবং জানালায় রুচিসম্মত পর্দা। একজন রোগীও তখন সে কেবিনে ভর্তি ছিলেন। সবগুলো কেবিনই এমন আধুনিকমানের উন্নত করা হয়েছে বলে জানালেন তত্ত্বাবধায়ক।
এরপর যাওয়া হয় দ্বিতীয় তলায় কার্ডিওলজি বিভাগে। এই বিভাগে আগে ছিল একটা ইউনিট। এখন দুই সাইডে দুটা করা হয়েছে। কার্ডিওলজি বিভাগের দুটা ইউনিটই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং নতুন টাইলস দিয়ে করা। এরপর পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে সেটিও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং উন্নতমানের টাইলস দিয়ে আধুনিকমানের করা হয়েছে। সে মুহূর্তে কয়েকজন রোগীও সেখানে ছিলো। হাসপাতালের নিচতলায় ইপিআই বিভাগে গিয়েও দেখা গেছে সেটিও আধুনিকমানের করা হয়েছে। মেয়র জানালেন, পৌরসভা থেকে হাসপাতালের রোগী এবং দর্শনার্থীদের জন্যে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা হিসেবে হাসপাতাল ভবনের ছাদের উপর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করে দেয়া হচ্ছে।
মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা সেবার মানসিকতা নিয়ে এ কাজগুলো করছি। এটা এই জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। চাঁদপুর জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলার মানুষও এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রচেষ্টায় এই হাসপাতালটিতে সেবার মান আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে এখন আইসিইউ ইউনিট রয়েছে। ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সার্ভিস ইউনিট খোলা হয়েছে। অপরিণত এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জন্ম নেয়া নবজাতক শিশুদের বিশেষ পরিচর্যার জন্যে ‘স্ক্যানো’ এবং ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার ইউনিট চালু করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবার এসব বিভাগ চালু করায় এখন আর চাঁদপুরের মানুষকে ঢাকা যেতে হয় না। আমি নিজেও এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছি। ভর্তি ছিলাম সপ্তাহেরও উপরে। তখনই আমি অনুভব করেছি হাসপাতালটিতে অভ্যন্তরীণ সেবার মান বাড়াতে আরো কিছু কাজ করতে হবে। আমি তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কেবিন ব্লকসহ অন্যান্য ইউনিট আধুনিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। তাতে শুধু চাঁদপুর শহরের নয়, পুরো জেলা ছাড়াও জেলার বাইরের মানুষও উপকৃত হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, মেয়র মহোদয়ের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। এটা কিন্তু পৌরসভার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তারপরও মেয়র মহোদয় সম্পূর্ণ সেবার মানসিকতা নিয়ে এ কাজগুলো করেছেন। সে জন্যে আমরা মেয়র মহোদয় তথা চাঁদপুর পৌরসভার প্রতি কৃতজ্ঞ।