• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাসপ্তমী পূজা

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আসুরিক শক্তি বিনাশ আর দেশের কল্যাণ কামনায় শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু
বিমল চৌধুরী ॥ আসুরিক শক্তি বিনাশ আর দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে গতকাল দেশব্যাপী শুভ সূচনা হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের। সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষজনের পাঁচ দিনব্যাপী বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপনে চাঁদপুর জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দও পিছিয়ে নেই। তারা সাড়ম্বরে অসুর বিনাশিনী দুর্গাদেবীকে আরাধনা করতে জেলার ২২৪টি পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন করেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় (চাঁদপুর পৌরসভার অভ্যন্তরে ৩৪) ৪০টি, হাইমচর উপজেলায় ৬টি, মতলব উত্তর উপজেলায় ৩৫টি, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩৬টি, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ২৯টি, শাহরাস্তি উপজেলায় ১৮টি, কচুয়া উপজেলায় ৪০টি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২০টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।
গতকাল ২০ অক্টোবর শুক্রবার শ্রীশ্রী শারদীয় দুর্গাদেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা সায়ংকাল দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পাঁচদিনব্যাপী বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। পূজামণ্ডপের সাজসজ্জায় কর্মরত কারিগর বা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিবিশেষ ছাড়া গতকাল দিনের আলোয় পূজামণ্ডপে তেমন দর্শনার্থীদের দর্শন দেখা না গেলেও সন্ধ্যা-রাত থেকে পূজারী ও দর্শনার্থীদের কিছু উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটসহ সকল পূজামণ্ডপে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
বিশেষ করে গত ২০২১ সালে শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন কোনো কোনো স্থানে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি ঘটে যাওয়ায় বর্তমান সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে অজানা আশঙ্কা বিরাজ করে। আর তা দূরীকরণে প্রশাসন এ বছরও ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন, যাতে কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার মত কোনো ঘটনা না ঘটে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পৌর মেয়র পূজারীদের সাথে মতবিনিময় করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্নে কিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছে। যদি সকলেই প্রশাসনের নির্দেশনাসমূহ কার্যকর করে এবং সচেতন থাকে, তাহলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলের সহযোগিতায় উৎসব হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত ও আনন্দময়। শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও এই উৎসবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যেভাবে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকেন তা দেখে সকলের হৃদয় মাঝেই উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রূপ নেয় মিলন মেলায়।
আজ ২১ অক্টোবর শনিবার মহাসপ্তমী পূজা। আজ দেবী নবপত্রিকায় প্রবেশ করবেন। সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী পূজার মধ্যে দিয়ে মহাসপ্তমী পূজা সম্পন্ন হবে।
প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও ব্যাপক আয়োজনে সুসজ্জিত করা হয়েছে পূজামণ্ডপ। জ্বলছে প্রতিযোগিতামূলক লাল, নীল, হরেক রকম বাতি। সৌন্দর্যের দিকে থেকে কে কতটুকু সুন্দর করতে পারে স্ব স্ব পূজামণ্ডপ, তারই নীরব প্রতিযোগিতা দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
তবে কোনো কোনো পূজামণ্ডপ শব্দ সন্ত্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। দেখা গেছে, অনেক প্যান্ডেলেই ইকোর গগন বিদারী আওয়াজ। যাকে ইতিমধ্যে শব্দ সন্ত্রাস হিসেবে মূল্যায়িত করেছেন অনেক দর্শনার্থী। তারা মনে করেন, অধিক আওয়াজে দেবী কতটুকু সন্তুষ্ট হতে পারবেন তা দেবী দুর্গাই জানেন। ঢাক, ঢোল, কাশর, বাদ্য বাজনায় কি দেবী অখুশি? যদি তা না হয়, তাহলে আমরা কেন পারি না স্বার্তিক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দেবী আরাধনা করতে। তবে এদিক দিয়ে কোনো কোনো প্যান্ডেলের পূজারীগণ অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন, তারা অত্যন্ত পরিমার্জিত পরিবেশে তাদের উৎসব উদ্যাপনে ব্যাপক  আয়োজন করেছেন। গতকাল রাতে চাঁদপুর পুরাণবাজার দাসপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে আয়োজিত পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা গেল প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্যে তাদের আয়োজন। সুবিশাল পূজামণ্ডপে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সারি সারি বট, শাল, সেগুন, বাঁশ ঝাড়সহ হরেক রকম গাছপালার ব্যাপক সমাহার। মনে হচ্ছে প্রকৃতি রক্ষায় দর্শনার্থীদের কাছে নীরব আকুতি জানাচ্ছেন পূজারীগণ।
পুরাণবাজার দাসপাড়া দুর্গামন্দির পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন দাস মনা জানান, প্রতি বছরই সকলকে নিয়ে সার্বজনীনভাবে আমরা পূজার আয়োজন করে থাকি। দেবী আরাধনার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করি সমাজের উন্নয়নে মানুষকে সচেতন করে কোনো থিম প্রকাশ করা যায় কিনা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা গত বছর দীর্ঘদিন সময় নিয়ে পূজা মণ্ডপে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। যা দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুগণ জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তা ব্যাপকভাবে মানুষের মাঝে তুলে ধরেছেন। এ বছরও আমরা পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পূজামণ্ডপে কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ স্থাপন করেছি। আমরা বুঝাতে চেয়েছি, জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন বিশুদ্ধ অক্সিজেন। আর তার জন্যে আমাদেরকে বৃক্ষদিগকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশ বিপন্ন হলে আমি আপনি কেউই নিরাপদ নয়। তারা পরিবেশ রক্ষায় সকলের প্রতি আবেদন জানান এবং তাদের আয়োজন সফল করার লক্ষ্যে সকলকে পূজা মণ্ডপে আমন্ত্রণ জানান।
গতকাল ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এদিন দর্শনার্থীদের তেমন দেখা মিলে নি। এ বছর দেবী ঘোটকে এসেছেন এবং যাবেনও ঘোটকে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ঘোটকে আসলে ঝড়, তুফানসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে পূজারীদের বিশ্বাস, মায়ের আগমনে পৃথিবীর সকল অনাচার দূর হবে, সকল ভয়, ভীতি উপেক্ষা করে শান্তিময় পৃথিবী গড়ে উঠবে।

 

সর্বাধিক পঠিত