• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সব্যসাচী লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী স্মারক অনুষ্ঠান

প্রকাশ:  ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আজকে আমাদের সবার পছন্দের মানুষ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার পঞ্চাশতম জন্মদিনের উৎসব পালন করা হচ্ছে। আমাদের চাঁদপুরে কারও এরকম করে পঞ্চাশতম জন্মদিন পালন করা এটাই মনে হয় প্রথম। জাতীয় পর্যায়ের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বড় সাংবাদিক, রাজনীতিক, তাদের সত্তরতম, আশিতম, পঞ্চাশতম, ষাটতম জন্মদিন উদ্যাপনের রেওয়াজ কিন্তু আছে। চাঁদপুরে এ রেওয়াজটি ছিলো না। এটি একটি নূতন সৃষ্টি সেটা যে কারোই মনে হতে পারে। একজন গুণী মানুষ তার জীবনের পঞ্চাশতম জন্মদিনটি পার করছেন, সেই জন্মদিনের আনন্দের সঙ্গে শুধু তার পরিবার নয়, আরো অনেক মানুষ যুক্ত হওয়ার সুযোগ হলো মন্দ কী। আমি তো মনে করি একজন গুণী মানুষকে আমরা ভালোবাসা জানাতে পারলাম, সম্মান জানাতে পারলাম, এটা খুবই ভালো হলো। গত ১৩ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় সব্যসাচী লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি উপরোক্ত অনুভূতি প্রকাশ করেন।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক, সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত ‘প্রাণবন্ত পঞ্চাশে’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, চাঁদপুরের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসিত বরণ দাশ, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসানউল্লাহ, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জেলা স্কাউটসের সম্পাদক অজয় ভৌমিক, পিপি অ্যাডভোকেট রণজিৎ রায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, চতুরঙ্গের মহাসচিব ও ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুন আল রশীদ, প্রবীণ মেলার উদ্যোক্তা ও প্রবীণ বিষয়ক লেখক হাসান আলী, কবি ও সম্পাদক মনসুর আজিজ, কবি মিজান খান, চাঁদপুর রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, উদীচী চাঁদপুরের সভাপতি ও কণ্ঠযোদ্ধা কৃষ্ণা সাহা, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী লীলা মজুমদার, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের সভাপতি আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খান, জেলা পরিষদের সদস্য লিলি বেগম, রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ রোটারিয়ান মাহমুদা খানম, যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি মির্জা জাকির প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, এই গুণী মানুষটির অনেক গুণ। তিনি একাধারে অনেক ধরনের লেখা লিখেছেন। তিনি গীতিকার, তিনি নাটকের রচয়িতা, তিনি গবেষক, তিনি নানা বিষয়ে লিখেছেন। উপন্যাস লিখেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন। তিনি পত্রিকার উপদেষ্টা, তিনি বিতর্ক আন্দোলনে একেবারে সামনের সারির যোদ্ধা। তিনি যে কোনো সামাজিক আন্দোলনে প্রয়োজন হলেই ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিকতা রাখেন। একেবারে জীবন নিয়ে উচ্ছল একজন মানুষ। সেরকম একজন মানুষ যার পঞ্চাশতম জন্মদিন পালনের সুযোগ হচ্ছে, এটাতো আমাদের সবার জন্যে আনন্দের।  তিনি এই বয়সেই বাইশটি বই লিখেছেন, এটাওতো কম কথা নয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ছড়ায় ছড়ায় বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, যা তার আগে আর কেউ করেনি।  ইলিশকে নিয়ে সব অসাধারণ ছড়া, ইলিশকে নিয়ে সব অসাধারণ লেখা পীযূষদা লিখেছেন। বিতর্ক নিয়ে তার লেখা, বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে তার লেখা, আমাদের যে বিজ্ঞান শিক্ষার উপরে জোর দিতে হবে, তার এসব লেখা পড়ে আমি খুব ঋদ্ধ হয়েছি। আমি মনে করি আজকের এ উদ্যোগটি আমাদের যারা লেখালেখি করেন, আমাদের যারা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংগঠকের কঠিন কাজটি করেন, যেটি করা আসলেই কষ্টকর, একদম ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো, সেটি সহজ সরল কাজ নয়। সে কাজটি যারা করেন, চাঁদপুরে অনেক মানুষ আছেন যারা করেন, তাদেরও ভালো লাগবে। আমরা তাদেরও সম্মান জানাতে শিখবো। তিনি বলেন, আমরা সবসময় মানুষ চলে গেলে, মরে গেলে সম্মান জানানোর জন্যে কাজ করে যাই। তখন তিনি তো আর জানতে পারেন না, তার পরিবার হয়তো জানে। কিন্তু তাদেরতো অনেক কষ্ট হয় যে, ইশ্ যদি বেঁচে থাকতে এই সম্মান পেতেন!
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বশির আহমেদ বলেন, কবি পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার একটি কাব্যগ্রন্থ ' শোকের অর্ঘ্যে বঙ্গবন্ধু ' আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। আমি মনে করি এ বইটি পড়লে আগামী প্রজন্ম খুব সহজেই বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনকে জানতে পারবে। সভাপ্রধানের বক্তব্যে কাজী শাহাদাত বলেন, তিনি একজন সব্যসাচী লেখক। তিনি কখনো কোনো লেখা লিখতে বললে না করেননি। তিনি পানির মতো। যখন যে পাত্রে রাখা হয় তখনই সে পাত্রের আকার ধারণ করতে পারেন। এটা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচক হলেও তার ক্ষেত্রে এই উপমার প্রয়োগটি ইতিবাচক। তিনি সব ধরনের লেখার ক্ষেত্রে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে বিষয়ানুগ মানিয়ে নিতে পারেন। ইতোমধ্যেই তার আরও অনেক বই প্রকাশের প্রক্রিয়ায় আছে। শতবর্ষ দীর্ঘায়ু পেলে তার গ্রন্থ সংখ্যা শতক পার হয়ে যাবে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
‘প্রাণবন্ত পঞ্চাশে’র আহ্বায়ক দৈনিক আদি বাংলার সম্পাদক আরিফ রাসেলের ব্যবস্থাপনায় এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রোটারিয়ান উজ্জ্বল হোসাইন। অনুষ্ঠানে মঙ্গল সঙ্গীত পরিবেশন করেন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, চাঁদপুর জেলা শাখার শিল্পীবৃন্দ। পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার লেখা মাকে নিয়ে গান ওরিবেশন করেন তাসফিয়া ফাহমি। আধুনিক গান পরিবেশন করেন মৌমিতা আচার্যী। নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খান ও কবি মিজান খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, অজয় ভৌমিক, হাসান আলী, হারুন আল রশীদ, মীরা রায় চৌধুরী। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সনাক, চাঁদপুরের পক্ষে জেসমিন আক্তার, মাহমুদ হাসান খান, মোশারেফ হোসেন, কৃষ্ণা সাহা ও মাসুদ রানা। সাহিত্য মঞ্চের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অনুবাদক ও কবি মাইনুল ইসলাম, কবি ও গল্পকার আশিক বিন রহিম, ইনার হুইল ক্লাব  অব চাঁদপুর সেন্ট্রালের পক্ষে সভাপতি মিতু আক্তার, সেক্রেটারি নাসরিন উজ্জ্বল প্রমুখ। কবি ও লেখকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কথাশিল্পী শাহমুব জুয়েল, আঙন সম্পাদক ম. নূরে আলম পাটোয়ারি এবং নাট্যজন আলমগীর হোসেন পাটোয়ারি, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিঠুন বিশ্বাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘প্রাণবন্ত পঞ্চাশে’র মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে লেখককে বরণ করা হয়। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশে লেখক তার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিনির্মিত হওয়ার কথা ব্যক্ত করে সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেষে কেক উদ্যাপনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত পঞ্চাশের সমাপ্তি টানা হয়।