৮২৭ কোটি টাকার চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন
প্রায় চার বছর অপেক্ষার পর অবশেষে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুর জেলা শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দিয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে অক্টোবর ২০২৩ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। চাঁদপুরে নদী ড্রেজিংয়ের জন্য ২৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বিদেশী অর্থায়নে বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে একনেক সভায় বিবেচনার জন্যে উপস্থাপিত হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার চাঁদপুর শহর রক্ষা প্রকল্পসহ ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এদিন রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ, পরিবেশমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর হলেও ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পাওয়ার খবর শহরবাসীর মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীগণ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নাগরিক চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় বড় ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার এমন খুশির খবরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চাঁদপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্প কাজটি যাতে টেকসইভাবে হয় তারও দাবি জানিয়েছেন।
চাঁদপুর দক্ষিণ অঞ্চলীয় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক পার্টির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্টু গাজী বলেন, শহর রক্ষা বাঁধসহ চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গন রোধের জন্যে আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। ইতিমধ্যে চাঁদপুর ও হাইমচর এলাকার ভাঙ্গন রোধে কাজ হয়েছে। এখন চাঁদপুর শহরকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় সরকার বিপুল অর্থ অনুমোদন দিয়েছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। এজন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রকল্প বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শহর রক্ষা বাঁধ। পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের নদ-নদীর ৯০ ভাগ পানি এখান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে মিলিত হয়। এ কারণে এর গুরুত্ব বেশি। প্রতিবছর বর্ষাকালে শহরবাসী নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে থাকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একনেকে ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প’ অনুমোদন লাভ করেছে। এজন্যে চাঁদপুরবাসী ভাগ্যবান। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির একক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলো।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুর শহর রক্ষায় বাঁধটিকে আরো টেকসই করার জন্যে ২০১৯ সালে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের জন্যে মোট কাজ হয়েছিল ১৬৮ কোটি টাকার। এছাড়া চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুর-সাখুয়া তীর সংরক্ষণসহ নদী ভাঙ্গনরোধে কাজ হয় আরো ১৫৬ কোটি টাকার। এবার ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্পের কাজ হবে। চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গনরোধে এত বিপুল অর্থ বরাদ্দ ডাঃ দীপু মনি এমপির সময়ে হয়েছে এবং হবে। যা চাঁদপুরবাসীর জন্যে বিরল ঘটনা।
১২ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন পাওয়া ১৯টি প্রকল্প হচ্ছে : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন)’ প্রকল্প, ‘ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-করেরহাট সড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক) (জেড-১০৩১) প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর ‘শুভপুর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প এবং ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্র্মাণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ‘কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ’ প্রকল্প, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন)’ প্রকল্প, ‘রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্যে ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প এবং ‘উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন)-২য় পর্যায়’ প্রকল্প; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প’; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্প; শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ’ প্রকল্প; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘মেঘনার শাখা নদীর ভাঙ্গন হতে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প, ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙ্গন হতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্প; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প।