• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আখন বাড়ি সপ্রাবির প্রধান শিক্ষিকার খুঁটির জোর কোথায়?

প্রকাশ:  ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট
  • শিক্ষার্থীদের চাঁদার টাকায় চলছে প্রধান শিক্ষিকার বাসার কাজের বুয়ার বেতন। 
  • স্লিপ বরাদ্দের টাকায় নামেমাত্র কাজ।
  • ক্লাস চলাকালীন বাহিরে কেনা কাটায় ব্যস্ত শিক্ষকরা।
  • ভর্তি এবং টিসিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়।
  • অপরিচ্ছন্ন নোংরা টয়লেট, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ।
  • প্রধান শিক্ষিকা নিজের ইচ্ছেমত স্কুলে আসা যাওয়া, নেই কোনো তদারকি।
  • স্কুলের সামনের মসজিদে নামাজ চলাকালীন সময়ে বেপর্দায় চলাফেরা এবং শিক্ষার্থীদের হৈইহুল্লুড়।

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার পশ্চিম শ্রীরামদী ২নং বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (আখন বাড়ি সপ্রাবি) জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শরীর চর্চা ছাড়াই ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়টিতে কোনো প্রকার তদারকি না থাকায় প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমা বণিকের খামখেয়ালী মতই নিয়মিত স্কুল পরিচালনা হয়ে আসছে। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত বিদ্যালয়ের মাঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং শরীর চর্চার মাধ্যমে ক্লাস শুরু করার নিয়ম থাকলেও এ বিদ্যালয়টিতে তা নেই। সর্বশেষ কবে যে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিলো এবং শরীর চর্চা করানো হয়েছে তা হয়তো ভুলে গেছেন প্রধান শিক্ষিকা নিজেই। শুধু তাই নয়, এছাড়াও রয়েছে আরো ব্যাপক অনিয়ম। শিক্ষার্থীদের চাঁদার টাকায় চলছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমা বণিকের বাসার কাজের বুয়ার বেতন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এবং অভিভাবকরা জানান, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমা বণিক তার পছন্দ মতো দু’জন সহকারী শিক্ষক নিয়ে নিজের ইচ্ছেমত স্কুল পরিচালনা করেন। তিনি একদিকে যেমন বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসেন না, অন্যদিকে আসলেও ১০টা থেকে ১১ টার পরে আসেন। এছাড়া বাড়ির কাজের বুয়াকে বিদ্যালয়ে এনে কোনো রকম ঝাঁড়ু দিয়ে থাকেন। কিন্তু ক্লাসরুম এবং টয়লেটগুলো কোনো প্রকার পরিস্কার-পরিছন্ন নেই। আর এই ঝাঁড়ু দেয়া বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছে ১০ থেকে ২০ টাকা চাঁদা তোলে সেই টাকা দিয়ে বাসার কাজের বুয়ার মাসিক বেতন পরিশোধ করে থাকেন। একই সাথে ভর্তি বাবদ ১০০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংকের টাকা, টিসিতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং বিভিন্ন প্রত্যায়ন পত্রের জন্যও প্রধান শিক্ষিকা বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু এখানেই শেষ নয়। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের টুকিটাকি রিপেয়রিং কাজের জন্য প্রতি বছর সরকারিভাবে যে স্লিপ বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। বরাদ্দকৃত সেই টাকা দিয়ে ঠিক মতো তেমন কোনো কাজই করানো হয়নি। নামেমাত্র টুকিটাকি কাজ করিয়ে বিভিন্ন রিসিট/ ভাউচার বানিয়ে স্লিপ বরাদ্দের টাকার কাজের হিসেবের বিল করে থাকেন। এছাড়া বিদ্যালয় চলাকালীন সময় বিদ্যালয়ের সামনে থাকা হকারের কাছ থেকে বিভিন্ন পোষাক কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন প্রধান শিক্ষিকাসহ সহকারী বেশ ক’জন শিক্ষিকা।
সরজমিনে গিয়েও এমন অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। গত কয়েকদিন পূর্বে ওই বিদ্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে গেটের কাছে ভ্যান গাড়ি ডেকে নিয়ে পোষাক ক্রয় করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা। তাদের এমন দৃশ্যের ছবি তুলতেই তারা দৌড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলানায়তনে চলে যান।
বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, স্লিপ বরাদ্দের টাকায় যে সকল রিপেয়ারিং কাজ করার কথা তার তেমন কিছুই করানো হয়নি। টয়লেটের দরজার সিটকিনি, জানালার গ্লাস, দেয়ালের আস্তর, ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ, বোর্ড, সবই ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যালয়ের সিঁড়ি রমের গ্লাস, দেয়ালের বিভিন্নস্থানে ফাটল, আস্তর খসে পড়া, এমনকি রংবিহীন দেয়ালে শ্যাওলা জমে রয়েছে। একই সাথে ২য় তলার টয়লেটে তালা ঝুলে আছে। নিচতলার টয়লেট খোলা থাকলেও অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশেই টয়লেট ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। সে টয়লেটের উপরে থাকা স্যানেটারী পাইপ ভেঙ্গেচুড়ে মরিচা ধরে আছে। যদিও বিদ্যালয়ের এসব কাজ স্লিপ বরাদ্দের টাকায় মেরামত করার কথা। তার কিছুই মেরামত করেন নি এই প্রধান শিক্ষক। নামেমাত্র টুকটাক কাজ করিয়ে প্রতিবছর বানানো ভাউচারে বিলের হিসেব দেখাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন এবং মুসল্লিরা অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং শরীরচর্চা করানো ছাড়াই প্রতিদিনের ক্লাস শুরু হয়ে থাকে এ বিদ্যালয়টিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষিকারা হকারদের কাছ থেকে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন। এসব বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও বেশ কয়েকদিন তাদেরকে ভর্ৎসনা করেছেন। তাতেও শৃঙ্খলায় ফিরেননি তারা। অন্যদিকে স্কুল লাগোয়া মসজিদে নামাজের সময়ও শিক্ষিকারা বেপর্দায় চলাফেরা করেন। এমনকি মসজিদে জামায়াতের সময় শিক্ষার্থীরা হইহুল্লুড় করলেও তাদেরকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনেননি শিক্ষিকারা।
জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই আখন বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়ে আসছে। কোনো প্রকার জবাবদিহিতা এবং তদারকি না থাকায় এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমা বণিকই যেনো বিদ্যালয়ের হতাকর্তা। প্রধান শিক্ষিকার এমন নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমা বণিকের কাছে এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি। সেজন্য বিরতির সময় আমরা এ সুযোগে হকারের কাছে কেনাকাটা করতে গিয়েছি।
এরপর স্কুলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শরীরচর্চা বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমরা করি, তবে আজকে করানো হয়নি। বাকি অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রশ্নপত্র আনতে যাবেন বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে পড়েন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ রাসেল আখন্দের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, হকারের কাছে কেনাকাটার বিষয়ে আমিও কয়েকদিন দেখেছি এবং মসজিদের ইমাম সাহেবের অভিযোগ শুনে তাদেরকে ডাক দিয়েছি। কিন্তু তাতেও পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, স্লিপ বরাদ্দ দিয়ে জানালা রিপেয়ারিংসহ আনুসঙ্গিক কাজ হয়েছে। আমি রং করার কথা বলেছি। বাকিটা আমরা কমিটির সবাই মিলে মিটিং ডেকে অন্যান্য কাজ এবং হিসেব নেবো।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল হাই জানান, আমরা দু’-একদিনের মধ্যেই ওই বিদ্যালয়ে যাবো। তারপর এসব অনিয়মের বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

 

সর্বাধিক পঠিত