বঙ্গবন্ধু ও এম এ ওয়াদুদ : ইতিহাসের যুগলবন্দী
বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু এক অনন্য সত্তা, অদ্বিতীয় মহানায়ক। এ মহাজ্যোতিষ্কের আলোয় অন্যসব তারাগুলো হয়ে গেছে ম্লান ও নিষ্প্রভ। তবুও এর ফাঁকে চন্দ্রালোকের মতো স্নিগ্ধ জ্যোতি ছড়িয়ে কেউ কেউ জানান দিয়েছেন আপন অস্তিত্ব নিজের কর্ম-স্বাতন্ত্র্যে। বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে যেমন জাতীয় চার নেতার নাম ওৎপ্রোতভাবে জড়িত তেমনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের নামটাও অগ্রগণ্য। এম এ ওয়াদুদ কেবল বঙ্গবন্ধুর সহচরের ভূমিকাই পালন করেননি, কখনো কখনো তিনি বঙ্গবন্ধুর পরামর্শক হিসেবেও নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও এম এ ওয়াদুদের সম্পর্কের রসায়নে নেতা ও সহচরের সম্পর্কের চেয়ে বন্ধুত্বের রসায়নই প্রাধান্য পেয়েছে। দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিলো মাত্র পাঁচ বছর। বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন ঊনিশশো কুড়ি সালে আর এম এ ওয়াদুদের জন্মসাল ঊনিশশো পঁচিশ। একজন জন্মেছেন বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। আর অন্যজন জন্মেছেন তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমার রাঢ়িরচর গ্রামে। বঙ্গবন্ধু যেমন আগস্টের পনর তারিখ শাহাদাত বরণ করেছেন তেমনি এমএ ওয়াদুদের প্রয়াণ দিবসও আগস্ট মাসের মধ্যে, আটাশ তারিখে। ইতিহাস এ দুই কীর্তিমানকে যেনো আবদ্ধ করে রেখেছে একই ব্র্যাকেটে বন্দী করে।
বাঙালির ইস্পাতকঠিন জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সূচনালগ্ন হতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচরে পরিণত হয়ে ওঠেন চাঁদপুরের এম এ ওয়াদুদ যাঁর কাজে পরিশীলিত শৃঙ্খলাই ছিল সর্বাগ্রে। ঊনিশশো সাতচল্লিশ সালের চৌদ্দই আগস্ট পাকিস্তানের জন্মলগ্নের অব্যবহিত পরে কোলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলের শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্রনেতৃবৃন্দ ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঢাকায় এসেই শেখ মুজিব যাদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করেন, এম এ ওয়াদুদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। আর এভাবেই দুজন মহান সংগঠকের কালজয়ী কর্মের যুগলবন্দীর সূচনা হয়। এম এ ওয়াদুদ ঊনিশশো আটচল্লিশের চার জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্মকালে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং একই বছর তিনি গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। ঊনিশশো ঊনপঞ্চাশ সালে '১৫০ মোগলটুলি'র ঠিকানায় 'ওয়ার্কার্স ক্যাম্প' গঠনকালে অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর তেইশে জুন আওয়ামী লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠনেও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আর এভাবেই সকল কাজে এমএ ওয়াদুদ মুজিবের নৈকট্যে অবস্থান করেন সহচরের ভূমিকা নিয়ে।
বাঙালির সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাঙালি কেবল মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিতই করেনি বরং এর মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে একুশ মানে মাথা নত না করা। এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই বাঙালিকে বিজয়ী হওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দুটো পর্যায়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ জড়িত ছিলেন ওৎপ্রোতভাবে। ঊনিশশো আটচল্লিশ সালের তেইশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে পূর্ববঙ্গ তথা কুমিল্লার কৃতীসন্তান, পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর সাথে বাংলা ভাষাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের দাবি জানান। কিন্তু খাজা নাজিমউদ্দীন এই দাবি নাকচ করে উল্টো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর অভিমত, একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হোক। নাজিমউদ্দীনের এই বানোয়াট বক্তব্যে ছাত্রসমাজের ভেতর প্রচ- ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ফেব্রুয়ারির ছাবি্বশ তারিখ ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। সংগঠকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, কমরুদ্দীন আহমদ এবং এমএ ওয়াদুদ। শেখ মুজিবের প্রস্তাবে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। ছাত্রনেতৃবৃন্দ ফজলুল হক হলে সভায় মিলিত এগার মার্চ তারিখে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করেন। এ সভাতেও শেখ মুজিব এবং এমএ ওয়াদুদ উভয়ে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ঊনিশশো আটচল্লিশের এগার মার্চ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে 'রাষ্ট্রভাষা দাবি দিবস' ঘোষিত হলো। এগার তারিখের আগে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতারা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়লেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করে এগার তারিখের তিনদিন পূর্বেই শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন। আগের দিন রাতে কাজ ভাগ করে নেয়া হলো, কে কোথায় পিকেটিং করবেন। এগার মার্চ সকালে পিকেটিংকারীদের ওপর পুলিশের তীব্র আক্রমণের ফলে শহর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এমএ ওয়াদুদ গুরুতর আহত হলেন। শেখ মুজিবের ভাষ্যে জানা গেলো অপর আহত ছাত্রলীগ কর্মী বখতিয়ারসহ এম এ ওয়াদুদকে জেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এভাবেই শেখ মুজিব ও এম এ ওয়াদুদ উভয়েই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়লেন। অন্যান্য বন্দীসহ তাঁরা উভয়েই পনর মার্চ সন্ধ্যায় মুক্তি পেলেন। ধীরে ধীরে মুজিবের সাথে এম এ ওয়াদুদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিবিড়তা বাড়তে থাকে।
ঊনিশশো ঊনপঞ্চাশ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। শেখ মুজিবুর রহমান চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এ ন্যায্য আন্দোলনের পক্ষে অবলম্বন করে প্রতিবাদে যোগ দেন। তার সাথে যুক্ত হন এমএ ওয়াদুদও। কিন্তু কিছু ছাত্র ও কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চাপ সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনে ভঙ্গ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের চাপে নত হয়ে শেখ মুজিব এবং এমএ ওয়াদুদসহ মোট সাতাশজন ছাত্র-ছাত্রীকে বহিষ্কার করে যার মধ্যে একমাত্র ছাত্রী ছিলেন লুলু বিলকিস বানু। এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্ররা সতের এপ্রিল ঊনিশশো আটচলি্লশ সালে লাগাতার ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিব এবং এমএ ওয়াদুদসহ অনেকেই কারাবন্দী হন। তাদের সাথে একমাত্র ছাত্রী হিসেবে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর বোন নাদেরা বেগমও আটক হন। ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান যখন আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমর্থনে কারান্তরীণ থেকেও চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি হতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন তখন এম এ ওয়াদুদ রাজপথে থেকে বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে একশ চুয়ালি্লশ ধারা ভঙ্গ করে পুলিশের হাতে আটক হন। এ কারণে সুদীর্ঘ কারাবরণ শেষে তিনি আগস্টের কুড়ি তারিখ অবমুক্ত হন। এভাবে শেখ মুজিব ও এম এ ওয়াদুদ যুগলবন্দিতার মাধ্যমে জেলে ও রাজপথে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান।
শেখ মুজিব যখন তরুণ নেতারূপে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অসামপ্রদায়িকতার দিকে চালিত করতে শুরু করেন তখন ঊনিশশো তিপ্পান্ন-চুয়ান্ন সালে এমএ ওয়াদুদ ছাত্রলীগকে অসামপ্রদায়িক সংগঠনে রূপান্তরিত করতে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। সিটি ছাত্রলীগ হতে প্রাদেশিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি তাঁর সাংগঠনিক নেতৃত্বের অবিসংবাদিত গুণাবলির কারণে পশ্চিমা সরকারের রোষানলে পড়ে ঊনিশশো চুয়ান্ন সালে কারাবরণ করেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে তিনি তাঁর প্রতিটা নিঃশ্বাসে সাহচর্য দিয়ে গেছেন।
শেখ মুজিবুর রহমান যখন 'ইত্তেহাদ' পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত ছিলেন তখন কোলকাতা থেকে প্রকাশিত 'ইত্তেহাদ' পত্রিকা এমএ ওয়াদুদ আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে হাতে হাতে বিলি করতেন। শেখ মুজিবের রাজনৈতিকগুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে এমএ ওয়াদুদ 'সাপ্তাহিক ইত্তেফাক'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ঊনিশশো চুয়ান্ন এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রাক্কালে ঊনিশশো তিপ্পান্ন সাল হতে 'দৈনিক ইত্তেফাক'-এর কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে নিরলস দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ঊনিশশো ছেষট্টিতে বাঙালির বাঁচার দাবি 'ছয় দফা' নিয়ে যখন শেখ মুজিব চষে বেড়াচ্ছেন বাংলার আলপথ-রাজপথ, তখন এসব সংবাদ ফলাও করে 'দৈনিক ইত্তফাক' এ প্রচার করতেন তাঁর ঘনিষ্ট সহচর এমএ ওয়াদুদ। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতাকে লক্ষজনের কণ্ঠে পরিণত করার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইত্তেফাকের নেপথ্যে থেকে জনাব এম এ ওয়াদুদ।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ওপর যে আস্থা রেখেছিলেন, আমৃত্যু তার মূল্য রেখে গেছেন ভাষাবীর ওয়াদুদ সাহেব। টিপু-দীপুর বাবার পরিচয়কে গৌণ করে তিনি একসময় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতীক। ইত্তেফাকের পুনর্জাগরণে সাফল্যের কারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁকে শ্রমিক অসন্তোষ দমনে দুটি শিল্প-কারখানার প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সাফল্যের সাথে চাকরি নয়, দলীয় দায়িত্ব ভেবেই সেই পদে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে আসা দর্শনার্থীদের মুখে এমনও শোনা যায়, এম এ ওয়াদুদ সাহেব বাংলাদেশ কেমিক্যাল বোর্ডের পরিচালক ও প্যাকেজিং বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে হাসতে হাসতে বঙ্গবন্ধুকে যা বলেছিলেন তা ছিল অনেকটা এমন যে, বঙ্গবন্ধুর পা দুটোর কারণেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে উঠানো কষ্টকর। কারণ কেউ দুর্নীতি করে এসে বঙ্গবন্ধুর পা ধরে মাফ চাইলেই বঙ্গবন্ধু পিতৃসুলভ উদারতায় তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি আর কমানো যায় না। ওয়াদুদ সাহেবের এ কথা থেকেই প্রমাণিত হয়, তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ছিলো নিকট বন্ধুর চেয়েও নিবিড়।
মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক এম এ ওয়াদুদ কেবল বঙ্গবন্ধুরই ঘনিষ্ট ছিলেন না, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিকগুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছেও অত্যন্ত স্নেহের এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। ঊনিশশো ছাপ্পান্ন সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী করাচী থেকে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সফর কালে বিমানবন্দরে এম এ ওয়াদুদকে না দেখে বঙ্গবন্ধুর কাছে তার খোঁজ করেন। বঙ্গবন্ধুই প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, ওয়াদুদ সাহেব গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন। একথা জানতে পেরে বিমানবন্দর থেকেই শহীদ সাহেব এমএ ওয়াদুদকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে চলে যান। এমনি করেই একই গুরুর স্নেহের পরশেও বঙ্গবন্ধু এবং এমএ ওয়াদুদ আবদ্ধ হয়ে রইলেন অবিস্মরণীয় যুগলবন্দী হয়ে।
কেবল নিজেদের মধ্যেই নয়, তাঁদের এ যুগলবন্দিতা প্রবাহিত হয়েছে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম তথা তাঁদের দুই কীর্তিমান দুহিতার মধ্যেও। এককালে এম এ ওয়াদুদ যাকে মামণি ডাকতেন, সেই ছোট্ট মেয়েটি আজ শেখ হাসিনা হয়ে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে আসীন হয়েছেন। তিনি তাঁর পিতার স্বপ্ন ও আদর্শকে প্রসারিত করে বাস্তবায়িত করে চলেছেন একের পর এক উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। আর বঙ্গবন্ধু যাকে একসময় মামণি বলে আদর করে ডাকতেন, সেই ছোট্ট মেয়েটি, যার নাম পিতা এমএ ওয়াদুদ দূরদর্শী প্রজ্ঞায় রেখেছিলেন দীপু মনি, তিনি আজ বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন মুজিব দুহিতার। ঠিক যেমনটি মুজিবের ঘনিষ্ট সহচর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপু মনির জীবনের ধ্রুবতারা পিতা এমএ ওয়াদুদ। শেখ হাসিনা যখন ইতিহাসে নিন্দিত ওয়ান-ইলেভেনের 'মাইনাস টু' ফর্মুলায় অন্যায়ভাবে আটক হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন তখন এম এ ওয়াদুদের জামাতা অ্যাডঃ তৌফিক নাওয়াজ এবং তাঁর কন্যা দীপু মনি শেখ হাসিনার শক্তিরূপে দাঁড়িয়েছিলেন অভেদ্য দূর্গ হয়ে। শেখ হাসিনার মুক্তিতে ওয়াদুদ-কন্যা ডাঃ দীপু মনি-ই রাজপথে নেমেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। কেউ কেউ যখন সংস্কারবাদীর খোলসে আওয়ামী রাজনীতির বারোটা বাজানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো, তখন ডাঃ দীপু মনি ছিলেন মুজিব-দুহিতা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহচর। ঠিক যেমনিভাবে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে এমএ ওয়াদুদ শেখ মুজিবের আদর্শকে মনে ও মননে ধারণ করে মৃত্যুর দিন অব্দি বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন, হবহু তেমনি ভাবেই তাঁর কন্যাও শেখ হাসিনার সাথে থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন দলীয় আদর্শকে। মুজিব যেমন এমএ ওয়াদুদকে দুটো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেরকমভাবেই মুজিব-কন্যাও ডাঃ দীপু মনিকে প্রথমে পররাষ্ট্র ও পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এর সুফলও তিনি হাতে-নাতে পেয়েছেন, যেমনি জাতির জনক তথা তাঁর পিতা পেয়েছিলেন এম এ ওয়াদুদের কর্মনিষ্ঠায়। এভাবেই প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু ও ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের যুগলবন্দিতা প্রবহমান আছে কালের কীর্তিময়তায়।