রাস্তা নয় যেনো মরণ ফাঁদ : কর্তৃপক্ষ উদাসীন
তাহফিজুস সুন্নাহ নেছারিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার কোমলমতি শিশুরা রাস্তা ব্যবহারে পোহাচ্ছে চরম ভোগান্তি। কখনও পিছলে পড়ে পা মচকে যায়, কখনও কাদায় পড়ে নোংরা হয় নিজেদের পরিহিত পোশাক। ইজিবাইক, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন উল্টে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তার কার্পেটিং, খোয়া, বালি আলাদা হয়ে গেছে। বিটুমিনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। পুরো রাস্তা খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খানাখন্দে পানি জমে ডোবার রূপধারণ করে।
বলছিলাম হাইমচর উপজেলার কালাচৌকিদার মোড় থেকে জনতা বাজার পর্যন্ত নিদারুণ অবহেলায় পড়ে থাকা মরণ ফাঁদ সেই রাস্তাটির কথা। যা সংস্কার না হওয়ায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সাধারণ মানুষ চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। কিন্তু বর্তমানে ইজিবাইক, সিএনজি, রিকশা, সাইকেল সহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে নিদারুণ অবহেলায়।
নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চরভাঙ্গা দাখিল মাদরাসা, ৩০ নং গাজীপুর মনিপুর ও ২৮ নং চরশোলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৪ কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ৫ টি মাদরাসার কোমলমতি শিশুরা এ রাস্তায় চলাচল করে। কখনও স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়, কখনো বা পড়ে গিয়ে বই খাতা ভিজে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। রাস্তায় বড় বড় গর্ত থাকায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪-৫ টি গ্রামের মানুষের হাটে-বাজারে যাওয়া বা উপজেলা সদরে যাওয়া আসা এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনসহ শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, নির্মাণের পর গত ১৫ বছরে সংশ্লিষ্টদের কেউই এই সড়কের দিকে নজর দেননি। আর এই নজর না দেওয়ার কারণে ৪-৫ টি গ্রামের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রাস্তাটিতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ওই সড়কটির সব স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা রাস্তার ইট বালি আলাদা হয়ে আগের কাঁচা রাস্তার মাটিও বের হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ডোবার মতো রূপ নিয়েছে। সড়কে একটি গাড়ি আরেকটিকে অতিক্রম করতে পারে না। হেলেদুলে চলে ভ্যান ও অন্য ইজিবাইকগুলো।
এতে ছোটখাটো যানবাহনসহ উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড, ৯নং ওয়ার্ড ও ৩ ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকেরাও।
এলাকার বাসিন্দা ও গন্ডামারা এ বি এস ফাজিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মুসলিম গাজী বলেন, সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি আমরা। আলগী বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে যেমন সমস্যা হচ্ছে, মসজিদে যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। কৃষকের কৃষি পণ্য বাড়িতে আনা নেওয়াসহ হাটে বাজারেও নেওয়া কষ্ট হচ্ছে।
স্কুলশিক্ষক ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ রাস্তায় ভ্যান-ইজিবাইক উল্টে যায়। রাস্তায় জমা পানির মধ্যে প্রায় সময় পড়ে গিয়ে জামা কাপড় নষ্ট হয়।
ভ্যানচালক আব্দুল কাদির বলেন, তারা ঠিকমতো মালামাল পরিবহন করতে পারেন না। এতে তাদেরও কষ্ট, গৃহস্থদেরও কষ্ট। ভ্যান টেনে নিতেই কষ্ট হয়, তার মধ্যে গর্তে আটকে গেলে চাকা সামনে বা পিছনে যেতে চায় না। তিনি জানান, ভ্যান না চালালে পেটে ভাত জোটে না। কিন্তু যে কয় টাকা কামাই করি তার অর্ধেক চলে যায় গাড়ি সারতে।
তাহফিজুস সুন্নাহ নেছারিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মাওলানা মোঃ জুলফিকার হাসান মুরাদ জানান, হাইমচরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আছে বলে আমার মনে হয় না। বারংবার অফিসে অবহিতকরণ ও পত্রিকার পাতায় লেখালেখির পরও রাস্তাটি সংস্কারের মুখ দেখেনি। ধীরে ধীরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। মাদরাসার কোমলমতি শিশুরা প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে চলাচল করে এ রাস্তায়। কখনও নিজে পড়ে কাপড় নোংরা হয়, বা কখনও অন্য গাড়ি উল্টে গায়ে পড়ে পঙ্গু হতে হয় নিজেকে। আবার কখনও পা মচকে গিয়ে মিস হয় মাদরাসার ক্লাস। তাই রাস্তাটি সংস্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।
৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার জানান, আমি নিজ উদ্যোগে কয়েকবার রাবিশ ও বালি দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ট্রাক, পিকাপ সহ মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে এগুলো টেকসই হয় না। আমার মেম্বারদের নিয়ে পুনরায় সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, এটা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের রাস্তা। তাদেরকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। তাই এ রাস্তাটি সরকারি ভাবে দ্রুত সংস্কার করার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর হাইমচর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থার কথা আমি জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। এ রাস্তায় দীর্ঘদিন কোনো প্রজেক্ট অনুমোদন না হওয়ায় রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রজেক্ট অনুমোদন হওয়ার কথা। সেটা অনুমোদন হওয়ার সাথে সাথেই এ সড়কটির মেরামত কাজ শুরু হবে।