সাংবাদিকদের সাথে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের প্রেস ব্রিফিং
মুজিব বর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না
‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের ১ জন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জমি ও গৃহপ্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৯ আগস্ট সারা দেশে ৪র্থ পর্যায়ে (২য় ধাপে) ২২ হাজার ১০১ জন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এই কার্যক্রমের আওতায় চাঁদপুর জেলার ১৫৮টি পরিবারও রয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ৮ আগস্ট সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিং করেন।
তিনি সাংবাদিকদের গাইড লাইন উল্লেখ করে বলেন, মুজিব বর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা যথাসাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। এই কর্মসূচির আওতায় ৯ আগস্ট সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলার ১৫৮টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে গৃহ ও ভূমি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলার মোট ১৪৩২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১৯৪টি এবং কচুয়া উপজেলার ৯৩টি হালনাগাদকৃত ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সকলকে পুনর্বাসন করায় আপাতত এ দুটি উপজেলায় কোনো ভূমিহীন নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলাকে এ পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন।
তিনি আরো বলেন, আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৪র্থ পর্যায়ের (২য় ধাপ) ২২,১০১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। সারাদেশে ১ম পর্যায়ে ৬৩,১৯৯, ২য় পর্যায়ে ৫৩,৩৩০ ও ৩য় পর্যায়ে ৫৯,১৩৩, ৪র্থ পর্যায়ে (১ম ধাপ) ৩৯,৩৬৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান করা হয়েছে। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে হস্তান্তরিত গৃহের সংখ্যা ২,৫৫,১৯২টি। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তালিকা অনুযায়ী চাঁদপুর জেলায় ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ১৪৩২টি। ১ম পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ১৩৫টি পরিবারকে, ২য় পর্যায়ে ১০৯টি পরিবারকে, ৩য় পর্যায়ে ১২৩টি পরিবারকে এবং ৪র্থ পর্যায়ে (১ম ধাপে) ৫৩টি অর্থাৎ সর্বমোট ৪২০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ব্যারাকে ৩৯৯টি পরিবার, বাখরপুর গুচ্ছগ্রামে ৯টি, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন কর্তৃক ২টি, উপজেলা পরিষদ, চাঁদপুর সদর কর্তৃক ৪টি অর্থাৎ মোট ৮৩৪টি পরিবারকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ৪র্থ পর্যায়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত ২১১টি গৃহের মধ্যে ৫৩টি গৃহ ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে এবং ১৫৮টি গৃহ উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
জেলা প্রশাসক বলেন, আজ উদ্বোধনযোগ্য ১৫৮ গৃহের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৭০টি, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি, কচুয়া উপজেলায় ৩৮টি, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১৫টি গৃহ সম্পূর্ণরূপে উদ্বোধনের জন্যে প্রস্তুত রয়েছে। এসব পরিবারকে ১ টাকা সেলামীতে ২ শতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও জমাখারিজ খতিয়ান সৃজন, সনদপত্র প্রদানসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক কবুলিয়ত দলিলের জন্যে পরিবারের প্রতি ২৫৮টাকা, নামজারি ও খতিয়ান প্রদান বাবদ ১১৭০টাকা প্রদান করা হয়েছে। এতে নামজারি, জমি রেজিস্ট্রেশন ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ তাদের কোনো টাকা ব্যয় করতে হয়নি। প্রতিটি একক গৃহের আয়তন ৪০০ বর্গফুট। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহে একটি টয়লেট, একটি রান্না ঘর ও একটি ইউটিলিটি স্পেস রয়েছে। আজ উদ্বোধনযোগ্য ১৫৮টি গৃহের মধ্যে চাঁদপুর সদরে ২৬টি ও কচুয়া উপজেলার ৪টি পরিবারকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের মাধ্যমে খাস জমিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং অবশিষ্ট ১২৮টি পরিবারকে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসামৎ রাশেদা আক্তার, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসানউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন। এ সময় প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জানতে চেয়ে আলোচনা করেন সাংবাদিক রহিম বাদশা, ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, শহীদ পাটোয়ারী, শাহাদাত হোসেন শান্ত, এমএ লতিফ, এমআর ইসলাম বাবু, কাদের পলাশ প্রমুখ। প্রেস ব্রিফিংয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাহান সাথী, সাংবাদিক আব্দুর রহমান, আব্দুল আউয়াল রুবেলসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসকের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকায় সাংবাদিকদেরকে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।