এই আমনবিকতা শেষ কোথায়?
আট ঘণ্টার অফিস যখন চব্বিশ ঘণ্টায়!
সিকিউরিটি গার্ডদের ৮ ঘন্টার ডিউটি এখন চব্বিশ ঘণ্টার। আর এটি নিয়ে সিকিউরিটি গার্ডদের মাঝে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আট ঘন্টার ডিউটি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করে চিঠি লিখে আবেদন করেন দুটি শ্রমিক সংগঠন এমপ্লয়িজন ইউনিয়ন, (সিবিএ) ৯৪১ ও পূবালী ব্যাংক কার্মচারী সংঘ ১৭৮৩।
একাধিক গার্ড নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, তারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ৮ ঘন্টার ডিউটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছেন, বিশেষ কোনো অগ্রগতি না হওয়ার তারা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও অতিষ্ট। পূবালী ব্যাংকের কর্তপক্ষ যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সমাধান না করেন তবে অদূরভবিষ্যতে আরও বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
পূবালী ব্যাংকের আর্মড গার্ডদের চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি, এটা কোনো ব্যাংকের ম্যানেজার স্বীকার করতে চায় না কিন্তু ডিউটি রেজিস্ট্রার ও গার্ডের সংখ্যা দিয়ে গার্ডদের ২৪ ঘন্টা ডিউটির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। গার্ডদের দিয়ে ম্যানেজাররা দিনের পর দিন বিরতিহীন ২৪ ঘন্টা ডিউটি করতে বাধ্য করেন দূরে বদলি ও চাকুরি চলে যাওয়াসহ বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে তাদের দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি করাতে বাধ্য করছেন।
পূবালী ব্যাংক লিঃ একটা স্বনামধন্য ও বিশ্বস্ত ব্যাংক কিন্তু ব্যাংকের নিজস্ব আর্মড গার্ডদের সাথে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ সময় ধরে চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি ও ছুটি নিয়ে মতবিরোধ চলছেই। গার্ডদের দাবি ৮ ঘন্টা ডিউটি ও সাপ্তাহিক ছুটি। ছুটির দিনে ডিউটি করলে উপযুক্ত ভাতা।
জানা গেছে গার্ডদের দাবির পক্ষে, পূবালী ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালকর নামে মামলা করেন শ্রম অধিদপ্তরের, শ্রম পরিদর্শক।
পূবালী ব্যাংব আর্মডগার্ড কল্যাণ পরিষদ ও শ্রমিক সংগঠনের ১০ দফা দাবিগুলো হলো : চব্বিশ ঘন্টার ডিউটির পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা ডিউটি, হয়রাণি ও প্রহসনমূলক বদলি বন্ধ করা, নিরাপত্তা ডিউটি ছাড়া অন্য কোনো ডিউটি না করা, সাপ্তাহিক ছুটিসসহ অন্য ছুটি উপভোগ করা, রাত্রিকালীন ডিউটি করানোর জন্য আলাদা জনবল নিয়োগ দেয়া, শ্রম আইন ২০১৮ অনুযায়ী অনুসারে সিবিএ আমড গার্ড কর্মীদের সংগঠন করার অনুমতি দেয়া, অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুতদের পুনরায় নিয়োগ দেয়া, ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করলে ওভারটাইম চালু করা ও প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে জোরপূবর্ক ডিউটি করানো যাবে না।
ইতোমধ্যে পূবালী ব্যাংকের সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা নির্দিষ্ট কর্মঘন্টার চেয়ে অধিক সময় (২৪ ঘন্টা) কাজে নিয়োজিত করা, অধিককাল কর্মের জন্য ঘন্টাভিত্তিক মজুরি না প্রদান করা, নিরাপত্তা কর্তব্যে নিযোজিত অবস্থায় সশস্ত্র প্রহরীকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করানো ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি না দেয়া প্রসঙ্গে এবং এর প্রতিকারের জন্য পূর্বালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের কাছে আবেদন করেছে তারা।
তারা আবেদনে উল্লেখ্য করেন পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় একজন করে এজি (আর্মড গার্ড) দিনের পর দিন ২৪ ঘন্টা করে ডিউটি করে যাচ্ছে। কোন কোন ব্রাঞ্চে একের অধিক আর্মড গার্ড থাকলেও ৮ (আট) ঘন্টা করে ডিউটির রোস্টার মানা হচ্ছে না। ডিউটি রেজিস্টারে রোটেশন দেখানো হলেও ১০% ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। দুইজন থাকলেও ঈদের ছুটিসহ প্রতিদিন উভয়কেই সার্বক্ষণিক ডিউটির অর্ডার করা হয়। ব্যবস্থাপকের পরামর্শে আমরা যদি কম্প্রোমাইজ করে একজন থাক ত্যাগ করি তবে তা অফিস অর্ডার অনুযায়ী অবৈধ এবং ব্যবস্থাপকের অনুমতি নেয়া হলেও উদ্দ্যেশ্যমূলক তাদের হয়রানিও করেন। ৬০ দিনে প্রায় ৪৮০ ঘন্টা অতিরিক্ত ডিউটির বিনিময়ে রাত্রিকালীন ভাতা মাত্র ১৫০০/- টাকা দেয়া হয় তাও আবার একের অধিক আর্মড গার্ড থাকলে ওই ৫০০/- টাকা বন্টন করা হয়। ছুটির দিনে অফিস অর্ডার ছাড়া ব্রাঞ্চ খোলা রেখে কাজ করানো হয় অথচ ছুটিকালীন কাজের জন্য ভাতা দেয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ রাজে তা প্রদান করা হয় না। বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়ে হেড অফিসের অডিটরদের জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আমাদেরর পরিবার আছে। আমাদেরর পরিবারকে সময় দেয়া কর্তব্য। আমরা সাপ্তাহিক ছুটিও পাই না। আর্মড গার্ডদের প্রমোশন খুবই সংক্ষিপ্ত আর্মড গার্ড থেকে সিনিয়র আর্মড গার্ড। ব্রাঞ্চের অধিকাংশ অফিসার জানেন যে, আর্মড গার্ডদের কাজ অভ্যন্তরে আমাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা হয় না। কারন অফিসের সবকিছুতে সহায়ক হিসাবে কাজ করতে। তাই রুঢ় আচরণের মাধ্যমে চা পানি পরিবেশন, টাকা সর্টিং, ভাউচার সর্টিং, ডাউচার ধাঁধা, বিল রিসিভ, স্ক্যানিং করা, স্টেশনারী আইটেম কালেক্ট করা, চিঠি বিলি করা, ডেসপাচ ডিউটি করা, বাসের টিকিট কাটা, পান-বিড়ি-সিগারেট-বাদাম-শসা-সিংগারা আনা, ম্যানেজারকে ব্যাগ হাতে নিয়ে এগিয়ে দেয়া ও লোকাল বাসের ভিতরে আসন সংরক্ষণ করে রাখাসহ যে যা আদেশ করছেন ভাই পালন করতে হয় অথচ ডিউটি রেজিস্টারে শুধু নিরাপত্তা ডিউটির স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কোন কোন ব্রাঞ্চে নিরাপত্তা ডিউটিসহ অন্যান্য কাজের অফিস অর্ডার করা হয়। অস্ত্র নিয়ে ডিউটিরত অবস্থায়ও ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য অফিসারদের আদেশ মানতে বাধ্য করা হয়। যা নিরাপত্তা আইনের ঘোর পরিপন্থী। পিয়ন ও ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক, অফিসার ও কাস্টমারদের সামনে ঘুমিয়ে থাকে। তার কাজ করতে হয় আর্মড গার্ডদেরকে। আর্মড গার্ড প্রতিবাদ জানালে ৩-৭ দিনের মধ্যে বদলি করা হয়। আমাদের সকালের নাস্তা করাকে কেন্দ্র করে একজনকে শোকজ করেছে। অপর একজনকে এক মাসে জোন ট্রান্সফারসহ তিন জায়গায় স্থায়ী বদলী করা হয়েছে। প্রাতরাশ, মধ্যাহ্ন ভোজ ও নৈশভোজ করাও আমাদের জন্য অন্যায়, বিনোদনতো দূরের কথা। আমাদের এতোটাই অমানবিক চাপে রাখা হয়। জেলখানার কয়েদির জন্যও তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। রিক্রুটের প্রারম্ভে ডিউটির যে নির্দেশনা দেয়া হয় তাতেও নিরাপত্তা ভিন্ন অন্য কোন কাজের কথা লিখা নেই। কোন যুক্তি তুলে ধরলে নানা ধরণের প্রহসনমূলক আচরন করা হচ্ছে। প্রায় ক্ষেত্রেই আর্মড গার্ডদের তুই তুমি করে ডাকা হয়। হেল্পার/পিয়ন হেড অফিসের চিঠি বা কোন অফিস অর্ডার ছাড়া ব্রাঞ্চে নিজেদের ইচ্ছে মতো বসবাস করছে। এতে করে ব্রাঞ্চের চাবি হারানো, মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি, মাদক সেবন, অফিসের বিভিন্ন জিনিস চুরি, ব্রাঞ্চের টেলিফোন ও এসি ব্যবহার ইত্যাদি করে থাকলেও ওদের কিছু বলা যায় না। কারন তারা ম্যানেজারের বিশেষ অলিখিত পাওয়ার নিয়ে থাকে। পাওয়ারের কারন তারা ম্যানেজারকে ব্যক্তিগত কাজে সহযোগিতা করে এবং এর প্রভাব আর্মড গার্ডের উপর বর্তায়। তারা যদি পরিকল্পিত ব্যাংক ডাকাতি করে থাকেন তবে সেই দায় আর্মড গার্ডদের উপরেই আসবে। অধিকাংশ ব্রাঞ্চে ম্যাসেঞ্জার কাম গার্ডকে দিয়ে নিরাপত্তা ডিউটি করানো হয় না। হেল্পার/পিয়ন ছুটি গেলে তাদের কাজ আর্মড গার্ডকে করতে বলা হয় কিন্তু আর্মড গার্ড ছুটি গেলে আর্মড গার্ডের ডিউটির জন্য অন্য কাউকে পাওয়া যায় না। পূবালী ব্যাংক ১৯৫৯ সাল থেকেই আর্মড গার্ড নিয়োগ করে আসছে। বাধ্যাতামূলক অবসরের চিঠি দেয়া হয়েছে ৫ জনকে।