• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

চাল উৎপাদন ২ লাখ ৭২ হাজার ৭শ’ ৪৪ মেট্রিক টন

প্রকাশ:  ২৫ জুন ২০২৩, ০৯:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর দেশের অন্যতম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জলবায়ু কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। ফলে ব্যাপক বোরোর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সবুজ মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্য কৃষকদের মনকে উদ্বেলিত করেছে।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা এই দুটি প্রকল্পের আওতাভুক্ত রয়েছে--চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ। এ পাঁচটি উপজেলা সহ ৮ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার বোরো চাল ২ লাখ ৭২ হাজার ৭শ’ ৪৪ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে বলে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এই তিন জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলায়ই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ১শ’  ৮৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫১ হাজার ৭ শ’  হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং ৪১০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে চাঁদপুর সদর ও শাহরাস্তি উপজেলার দু ইউনিয়েন সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের সমলয় চাষাবাদ করা হয়। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এ ধান কাটার উদ্বোধন করেন। জেলার সব উপজেলার বোরো ধান ঘরে উঠেছে। বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, উপজেলাভিত্তিক চাঁদপুর সদরে ৭ হাজার ৫শ’  ২৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৫শ’ ২৫ মেট্রিক টন, মতলব উত্তরে ৯ হাজার ৯শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ২৬ মেট্রিক টন, মতলব দক্ষিণে ৬ হাজার ৭শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৭শ’ ৮৪ মেট্রিক টন, হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৫শ’ ১০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৯শ’ ৫৪ মেট্রিক টন, শাহরাস্তিতে ৯ হাজার ৭শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৯০ মেট্রিক টন, কচুয়ায় ১২ হাজার ৬শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৫শ’ ৪৪ মেট্রিক টন, ফরিদগঞ্জে ১০ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৩শ’ ৪৮ মেট্রিক টন এবং হাইমচরে ৬শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি ২০২২-২৩ বছরের রবি মৌসুমে ৬শ’  মেট্রিক টন বোরো ও ৬শ’ ৩৩ কেজি নানা জাতের শাক-সবজির বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা সংখ্যায় ১০ কেজি পরিমাপের বস্তায় ৫ হাজার ৭শ’ ৮৫ টি।
জেলার সব উপজেলার ১৩৬ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব বীজ স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারে পৌঁছানো হয়েছে।
ধানের বীজ ব্রি আর ১৬, ২৮, ২৯, ৫৫, ৮৪, ৫৮, ৯২, ৯৬, ৮৯ ও বাংলা জিরা সরকারিভাবে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানায়।
ধান, গম, আলু, পাট, আখ, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, মুগ-মসুরি, মিষ্টি আলু, সয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। চাঁদপুরে ১২টি হিমাগার ও ১টি বীজ ভাণ্ডার রয়েছে। যাতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ।
উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, সেচ সুবিধা, সার ও বিদ্যুৎ ভর্তুকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে।
 চাঁদপুরে এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিলো প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষি ব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়েছে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩ শ ২২ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে সকলে আশাবাদী।
২৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। ধান, গম, আলু, সরিষা, পাট, সয়াবিন, আখ, অভিন্ন শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০, ১৬, ১৭, ১৯-এর আওতাভুক্ত।
জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামক দুটি প্রকল্পে ২৩ হাজার ৩ শ’  ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোবারক হোসেন জানান, এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদ হয় ৬৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে। আর বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭শ’ ৪৪ মেট্রিক টন।