ইসলামে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের গুরুত্ব
প্রকৃতি আল্লাহর দান, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। পরিবেশ ও প্রতিবেশের অন্যতম নিয়ামক হলো উদ্ভিদ ও গাছপালা। গাছগাছালি, বৃক্ষতরু ও লতাগুল্ম থেকেই আসে আমাদের জীবনধারণ ও জীবন রক্ষার সব উপকরণ। প্রিয় নবীজি (সাঃ) নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরামকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক বনায়নও করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বৃক্ষরোপণকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বন ও বন্য পশুপাখি আল্লাহপাকের দান ও প্রাকৃতিক নেয়ামত। নবী করিম (সাঃ) এগুলোর সংরক্ষণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছেন। ওই এলাকায় গাছপালা কাটা এবং সেখানে পশুপাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ।
বৃক্ষলতা না থাকলে এ জগতে মানুষের বসবাস অসম্ভব হতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মাজিদে বলেন, ‘তিনি আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর আমি তদ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গম করি, অনন্তর তা থেকে সবুজপত্র উদ্গত করি, তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খজুরবৃক্ষে মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুর, জলপাই-জইতুন ও ডালিমের বাগান সৃষ্টি করি। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। লক্ষ করো এর ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং এর পরিপক্বতাপ্রাপ্তির প্রতিও লক্ষ করো। অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে এতে নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত : ৯৯)। ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো। তিনি তোমাদের জন্যে তা দিয়ে জন্মান শস্য, জইতুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত : ১০-১১।
আল্লাহ তা’আলা প্রকৃতিকে মানুষের জন্যে জীবনধারণের অনুকূল, বাসযোগ্য, সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা ও উদ্ভিদ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অন্যতম প্রভাবক হলো উদ্ভিদ। বৃক্ষের জন্যে পানি অপরিহার্য, গাছপালা মাটিতে পানি সংরক্ষণে সাহায্য করে এবং বনবনানী থাকলে সেখানে বৃষ্টিপাত হয়। পানি ও উদ্ভিদ জীবনচক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে, অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা পৌঁছান, তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত : ৪৮)।
মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আগুন। আগুনের অন্যতম উৎস বৃক্ষ। আল্লাহতা’আলা বলেন, ‘যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে অগ্নি উৎপাদন করে দিয়েছেন, সে মতে তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালিয়ে নিতে পারো।’ (সুরা-৩৬ ইয়াসিন, আয়াত : ৮০)। ‘তোমরা যে অগ্নি প্রজ্বলিত করো, তা লক্ষ করে দেখছ কি? তোমরাই কি অগ্নি উৎপাদন বৃক্ষ সৃষ্টি করো, না আমি? আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র।’ (সুরা-৫৬ ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭১-৭৩)।
উদ্ভিদ ও বৃক্ষ থেকে আমরা খাদ্য পাই। আল্লাহতা’আলা বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিচূর্ণ করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জইতুন, খেজুর এবং বহু বৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল ও গবাদিপশুর খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর জীবনধারণের জন্যে।’ (সুরা-৮০ আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)। ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদ্গত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা আহার করে। তারা কি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হবে না?’ (সুরা-৩২ সেজদা, আয়াত : ২৭)।
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর বিনিময়ে তাকে এই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিফল দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)। গাছের প্রতিটি পাতা আল্লাহর জিকির করে। সেই জিকিরের সওয়াব রোপণকারীর আমলনামায় লেখা হয়। তাই আমাদের বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন করা উচিত। গাছ লাগাতে হবে, গাছের পরিচর্যা করতে হবে এবং অকারণে বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি পরিপক্ব গাছ কাটার আগে তিনটি চারা গাছ লাগাতে হবে।