কচুয়ায় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কচুয়ার আশ্রাফপুরে যৌতুকর দাবিতে স্ত্রী শাহনাজকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাইর আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বামী মাইনুদ্দিন মহিনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামী পলাতক ছিলেন।
মাইনুদ্দিন কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর গ্রামের আবু জাফরের ছেলে। হত্যার শিকার শাহনাজ একই ইউনিয়নের চাঙ্গিনী গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মাইনুদ্দিন শাহনাজকে তার পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে করে। যার কারণে মাইনুদ্দিনের পরিবার তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরপর মাইনুদ্দিন ও তার পরিবার শাহনাজের নিকট দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে অত্যাচার করে। ঘটনা জানাজানি হলে শাহনাজকে তার মামা রুহুল আমিনের পনশাহী গ্রামে নিয়ে রাখে। এরপর মাইনুদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন অঙ্গীকারনামা দিয়ে শাহনাজকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি মাইনুদ্দিনের পরিবার শাহনাজকে তার পিতার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু যৌতুক এনে দিতে না পারায় বাক্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওইদিন সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে মাইনুদ্দিন শাহনাজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে শাহনাজের মাথা হতে পা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। অজ্ঞাত ব্যক্তির মাধ্যমে এই ঘটনা জানতে পেরে শাহনাজের পরিবার তাকে প্রথমে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর ১১ জানুয়ারি সকালে মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় শাহনাজের চাচা মোঃ আকতার হোসেন বাদী হয়ে কচুয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাইনুদ্দিন, তার পিতা আবু জাফর, মা মনোয়ারা বেগম ও ভাই শাহজাহানকে আসামী করে মামলা করেন।
ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কচুয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নূরুল ইসলামকে। তিনি তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১ জুন আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) খোরশেদ আলম শাওন জানান, মামলাটি দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় চলামান অবস্থায় ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। তবে মামলার রায়ের সময় আসামী পলাতক ছিলো। এছাড়া অপর ৩ আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোঃ ইলিয়াছ মানছুরী।