ডাকাতিয়ায় বন্ধ হয়নি অবৈধ প্রক্রিয়ায় মাছ শিকার
ডাকাতিয়া নদীতে অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছ শিকার বন্ধ হয়নি। রিং চাঁই, জাগ এবং জাগে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে শাহরাস্তি উপজেলা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর এ অংশে বিপুল সংখ্যক অবৈধ জাগ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও মৎস্যজীবীরা প্রকাশ্যে মাছ শিকার করে আসছে। জাগের ফাঁদে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনাসহ বিভিন্ন আকারের মাছ প্রতিনিয়ত ধরা হচ্ছে। যার ফলে মাছের অবাধ বিচরণে বাধা, প্রজননে বিরূপ প্রভাব ও উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।
ডাকাতিয়া নদী সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট কিছু অংশ দখল করে লম্বা বাঁশের খুঁটি এবং খুঁটির সাথে পানিতলানি বরাবর আড়াআড়ি বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়। এই ঘেরের ভেতরে কচুরিপানা আটকে রাখা হয়। কচুরিপানার নিচে পানির ভেতর ডোবানো থাকে ডালপালাযুক্ত গাছ বা গাছের ঝাড়। এর মধ্যে দেয়া হয় মাছের খাবার ও কচুরিপানা, যাতে স্রোতের টানে অন্যত্র চলে না যায়। সেজন্যে নির্দিষ্ট জায়গাকে বেঁধে ঘেরা হয়। এভাবে মাছ শিকারে জাগ নামক ফাঁদ তৈরি করা হয়।
১০-১৫ দিন পর পর জাগটি জাল দিয়ে ঘিরে পরিষ্কার করা হয়। তারপর জাল টেনে সব মাছ তুলে ফেলা হয়। অনেকে জাগে কীটনাশক ব্যবহার করেন। জাগে কালিবাউশ, আইড়, শোল, গজার, বাইন, কৈ, চিংড়ি, শিং, পুঁটি অর্থাৎ দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বেশি ধরা পড়ে। এ ছাড়াও বোয়াল, রুই, কাতল, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দেশীয় ডিমওয়ালা মাছ ও পোনাসহ বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা হচ্ছে। যার ফলে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।
মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন-১৯৫০-এর ধারা-৩-এর বিধিমালায় ৩(আ)তে বলা হয়েছে, মাছ ধরার জন্য নদী বা জলাশায়ে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নদী মধ্যস্থ বেড়া, বাঁধ, ঢিবি এবং অন্য কোনো কাঠামো নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা-৩-এর বিধিমালায় ৩(গ)তে বলা হয়েছে, পানিতে বিষ প্রয়োগ, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে মৎস্য চারণ ক্ষেত্র দূষিত করে বা অন্য কোনোভাবে মাছ ধ্বংস করা বা সে মর্মে উদ্যোগ গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। উল্লেখিত আইন অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড (তবে ১ বছরের নিচে নয়) অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। অথচ মৎস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী, মৎস্যজীবী ও ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা দিনের পর দিন দিব্যি অবৈধভাবে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই বিপুল সংখ্যক অবৈধ জাগ ও জাগে কীটনাশক এবং কারেন্ট ব্যবহার হলেও রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।