আন্তঃবিভাগীয় সিএনজি অটোরিকশা চোর চক্রের ৮ সদস্য আটক
প্রাইভেটকারসহ চার গাড়ি জব্দ
চাঁদপুর জেলা পুলিশের জালে আটক হয়েছে আন্তঃবিভাগীয় সিএনজি অটোরিকশা চোর চক্রের ভয়ঙ্কর ৮ সদস্য। এদের প্রত্যেকের বাড়ি সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায়। তাদের থেকে ৩টি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় এবং হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের নির্ঘুম অভিযানে ঘটনার দুইদিন এবং মামলা দায়েরের একদিনের মাথায় পুরো চোরচক্রকে আটক ও চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এই চক্রের আরো দুই সদস্য পলাতক রয়েছে।
পুরো বিষয়ে বুধবার (৩১ মে) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে এক চোরকে শনাক্ত করে তাকে আটকের পর পুরো টিমের ৮ সদস্যকে আটক করা হয়। এর পরপর সিএনজি চালিত ৩টি অটোরিকশা উদ্ধার এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। আটককৃতদের সবার বাড়ি সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায়। এরা দেশের বিভিন্ন জেলায় এই কাজ করতো। মালামাল উদ্ধারসহ চোর চক্রকে সিলেটে গিয়ে আটকের অভিযানে মূল নেতৃত্ব দেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ। যার তদারকি করেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) ও হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঞ্জজ কুমার দে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পুলিশকে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে। আসামীদের আটকে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করেন হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ মিজবাহুল আলম, সুফল চন্দ্র সিংহ, পলাশ মজুমদারসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
আটককৃত আসামীরা হলো সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার মৃত নঈম উল্যাহর ছেলে আনহার আলী (৩৫), মোঘলা বাজার থানার মোঃ শফিকুর রহমানের ছেলে বিল্লাল হোসেন কালা বিল্লাল (৩৪), বিশ্বনাথ থানার সোনাপর আলীর ছেলে বিল্লাল হোসেন (২৪), জৈন্তাপুর থানার আব্দুস সালামের ছেলে মোঃ শিমুল আহম্মেদ (২৪), গোলাপগঞ্জ থানার মৃত তোয়াজ উল্লাহর ছেলে আবুল বাছিত (৪০), গোয়াইনঘাট থানার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মোঃ আলমগীর (২৬) এবং হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার মৃত আলাউদ্দিন খানের ছেলে মোঃ নজরুল খান (২৬) ও একই জেলার বাহুবল থানার মোঃ আব্দুল মালেকের ছেলে মোঃ সোহান মিয়া (২৪)। এর বাইরে সজলু মিয়া ও ঊষার আলী পলাতক রয়েছে। আটক ৮জনের মধ্যে নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর পলাতক আসামী সজলু মিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার নং ২৯, তারিখ ২৮/৫/২০২৩ খ্রিঃ। আটককৃত আসামীদের বুধবার আদালতে পাঠানো হলে আদালত সবাইকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে লিখিত প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা যায়, ২৬ মে হাজীগঞ্জের দক্ষিণ রায়চোঁ গ্রামের মোঃ শরীফ হোসেনের একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরির ঘটনার সূত্র ধরে এই চোর চক্র আটক এবং গাড়ি জব্দ হয়। আসামী চোর সজলু (পলাতক) ও উষার আলী (পলাতক) সিএনজি অটোরিকশা চুরি করার উদ্দেশ্যে হাজীগঞ্জ বাজারসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় এসে অবস্থান করে বিভিন্নস্থান রেকি করে বেড়াতো। রেকি করা শেষে ঊষার আলী হাজীগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করে। এর মধ্যে গত ২৫মে চোর সজলু হাজীগঞ্জ হতে সিলেটে চলে যায়। সজলু সিলেটে গিয়ে তার অপর সহযোগী আনহার আলী, নজরুল, সোহানসহ অন্যরা একটি প্রাইভেটকার (জব্দকৃত) নিয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে চোর সজলু অপর সহযোগী বিল্লালকে খবর দিয়ে সিলেট থেকে নিয়ে আসে। এরপরেই এরা সবাই কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে একত্রে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ বিশ^রোড চৌরাস্তায় চলে আসে। এখানে এসে সজলু প্রাইভেটকার থেকে নেমে যায় এবং আগে থেকে হাজীগঞ্জে থাকা ঊষার আলীসহ পূর্বে রেকি মোতাবেক উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ রায়চোঁ এলাকায় চলে যায়। এদিকে প্রাইভেটকারে থাকা অপর চার সহযোগী প্রাইভেটকারটি নিয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে অবস্থান নেয়।
পরের দিন ২৬ মে তারা হাজীগঞ্জ বাজার এলাকা তিনবার রেকি করে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করে তারা হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার মান্নান গ্যাস পাম্পে চলে আসে। এখানে এদিন রাত প্রায় দেড়টার দিকে একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরি করে আসামী আনহার আলীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়, যা চালিয়ে সিলেটে নিয়ে যাবার জন্য বলা হয়। সিলেটে যাওয়ার পথে সিএনজিসহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক হয় আনহার আলী। মূলত আনহার আলীর দেয়া তথ্য মতে পুরো ঘটনা, অন্য সকল সিএনজি জব্দ ও অন্য আসামীদের সিলেট হতে আটক করতে সমর্থ্য হয় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহসহ চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে কর্মরত প্রায় অর্ধশত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।