ফরিদগঞ্জে মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপির টিভির সাক্ষাৎকার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রেস রিলিজ
সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা ও উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এমপি তার বক্তব্যে
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান কর্তৃক বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকার, সরকারের উন্নয়ন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের পরিবর্তে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও প্রশাসনের অনুরোধে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শনিবার (২০ মে) বিকেলে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর মেয়র, ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারী ও কারা নির্যাতিত নেতা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী এবং সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকারের যৌথ স্বাক্ষরে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, গত ১৫ মে যমুনা টেলিভিশনের ‘এমপির কাছে প্রশ্ন’ শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপির ৫১ মিনিটের বক্তব্যটি আমাদের নজরে এসেছে। তিনি তার বক্তব্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকের নাম উল্লেখ করে যেভাবে বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা দুঃখজনক। মহান জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য এভাবে কথা বলার কারণে শুধুমাত্র আমরা নই পুরো ফরিদগঞ্জবাসী হতাশ। তিনি নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে দলের, সরকারের, এমনকি দলের নেতা-কর্মীদের সম্মানহানি করেছেন। একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে একের পর এক মিথ্যা ও মিথ্যে তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের সুরে সুর মিলিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে নিয়ে বিএনপির রাতের ভোটের অভিযোগের স্বীকার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তিনি পূর্বের ন্যায় দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে বাইরে রেখে নিজেই প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রতিনিধি সৃষ্টি করে নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখাসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সুসংগঠিত নেতৃত্ব সর্বদা তার দিকে চেয়েছিলো। বর্তমানে প্রতিনিধিদের অত্যাচারে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। যার সুবাতাস ফরিদগঞ্জের প্রতিটি অঞ্চলে লেগেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ পর্যায়ের তালিকা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়ের উপজেলা পর্যায়ের তালিকা দেখলেই প্রমাণ মিলবে। শফিকুর রহমান এমপি বলেছেন, ‘৫০ বছরে যে সমস্ত কাজ হয়নি আমি সেগুলো করে দিয়েছি’। এমন বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ধারাবাহিক ১৪ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নকে অস্বীকার করেছেন।
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকার, নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে অসম্মানজনক বক্তব্য দিয়েছেন। তা আমাদেরকে তথা আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিব্রত করেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১২ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই কমিটির সহযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবমহিলা লীগ, হকার্স লীগসহ সকল অঙ্গ-সংগঠনের সম্মেলন হয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করা এবং জাতীয় ও দলীয় সকল কর্মসূচি পালন করে আসছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং দুটি পৌরসভা নির্বাচনে আমাদের দলের মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি দলের পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়নের পরিবর্তে তার প্রতিনিধি ও জনবিচ্ছিন্ন লোকদের মনোনয়ন নিশ্চিত করায় দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয় এবং ইউপি নির্বাচনে তার ভূমিকা ও সাংগঠনিক সহযোগিতা ছিলো না। অথচ তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সময় রাত ১২টার পর আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশাসনের লোকজনের সাথে হাত মিলিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তন করে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের হারানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে অসত্য। তার কথাবার্তায় এটি প্রতীয়মান হয়, তিনি বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। যমুনা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে তিনি মিথ্যাচার করে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। এছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও তিনি বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে দল এবং সরকারকে বিব্রত করেছেন। তিনি দলের ও সরকারের উন্নয়নের প্রচার বাদ দিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও তার দলীয় রাজনীতির প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে বেশি সময় কাটিয়েছেন। দলের একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিকে পর্যন্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে তিনি দ্বিধা বোধ করেন নি। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে হামলা চালায় উনার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি বাহিনী। সেই হামলার মাধ্যমে তারা জাতির পিতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাইনবোর্ড ভাংচুর করে এবং দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে আহত করেন। পরে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই সাজানো মামলা দিয়েছেন। আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা ওই মামলায় এখনো আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এমপির এ সকল প্রতিনিধি টিআর, কাবিখা, কাবিটা, গভীর নলকূপ স্থাপন (গভীর নলকূপ ২৫/৩০ হাজার টাকা), বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, টিসিবি কার্ড এবং রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ হতে শতকরা ৩০ ভাগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্যদের বিতরণ করেন। যা তদন্তে প্রমাণ মিলবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ১৫ মে প্রচারিত যমুনা টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মুহম্মদ শফিকুর রহমানের বক্তব্য তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে যে, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের ছিলেন না। তিনি বিশেষ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে নিজের এবং তার প্রতিনিধিদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। মাদকের ব্যাপারে সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি জিরো টলারেন্স দেখাবেন এমন স্বপ্ন দেখিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে প্রতিনিধি বানিয়ে তার রাজনীতি পরিচালনা করছেন। এখন মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জনপ্রিয় বলে তিনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও জনগণের কাছে তা হাস্যকর বলে প্রতীয়মান। উল্লেখ্য, প্রতিনিধি প্রথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কোথাও প্রচলিত না থাকলেও তিনি প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাই আজকের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করছি।