আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত ফরিদগঞ্জ
এক পক্ষের মিছিল, অন্য পক্ষের প্রেস রিলিজ
শনিবার (২০ মে) ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন এবং পাশেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে এমপি সমর্থিত লোকজনের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে উপজেলা সদরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রেসক্লাব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) পুলিশের উপস্থিতি ছিলো। অন্যদিকে এমপি সমর্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের যুবলীগের অফিসে অবস্থান করতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ও প্রশাসনের অনুরোধে সাংঘর্ষিক অবস্থা এড়াতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে একই বিষয়ে প্রেস রিলিজ দিয়েছে।
শনিবার (২০ মে) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান সমর্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে এমপি মনোনীত প্রতিনিধিরা, ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এই মিছিল সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা জিএম হাছান তাবাচ্চুম, জাহাঙ্গীর আলম, রফিকুল ইসলাম, ইসমাইল পাটওয়ারী, ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ খান, আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, নজরুল ইসলাম সুমন, পুতুল সরকার, যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন ও আল-আমিন পাটওয়ারী। এর আগে সকাল থেকেই এমপি সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রেসক্লাবের পাশে যুবলীগের অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। পরে তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
অন্যদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনে ‘এমপির কাছে প্রশ্ন’ শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বাংলাদেশ সরকার, সরকারের উন্নয়ন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন এবং চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও এই বিষয়ে শনিবার (২০ মে) বেলা ১১টায় ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিল দলটি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি ও প্রশাসনের অনুরাধে সাংঘর্ষিক অবস্থা এড়াতে তারা সংবাদ সম্মেলনের পরিবর্তে একই দিন বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই অনতিবিলম্বে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন। আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমাদের দাবির বিষয়ে এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান অবগত রয়েছেন।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার জানান, টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে এমপি মহোদয় সরকার, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং দল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তিনি বিএনপির সুরে সুরে কথা বলে সরকার, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করলেও তারা পাল্টা কর্মসূচি দেয়। পরে আমরা শান্তির লক্ষ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমাদের কথা জানিয়েছি। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান জানান, আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্যে বলেছি। তারপরও পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন ছিলো প্রেসক্লাব ও যুবলীগ অফিস এলাকায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা জানান, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে আমি উভয় পক্ষকে বলেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাদের কথা মেনে সংবাদ সম্মেলন করেনি। অন্যদিকে অন্যপক্ষও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।